শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

১৪ বছরে সরকারি খরচে আইনি সেবা ৯ লাখ মানুষকে

জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ

আরাফাত মুন্না

১৯৯৮ সালে দিলীপ ভট্টাচার্যের কাছ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ জমি কেনেন মানিকগঞ্জের স্কুলশিক্ষক রবীন্দ্রনাথ কবিরাজ। পরে প্রতিবেশী লালমোহন সাহা অগ্রক্রয়ের (প্রিয়েম্পশন) মামলা করেন। নিম্ন আদালত থেকে হাই কোর্ট পর্যন্ত মামলা চলে ১৯ বছর। হেরে যান রবীন্দ্রনাথ কবিরাজ। অর্থের অভাবে আপিলও করতে পারেননি। দিন পার করছিলেন উচ্ছেদের শঙ্কা নিয়ে। পত্রিকা ও পোস্টার দেখে দ্বারস্থ হন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির। দ্রুত আইনজীবী নিয়োগের পর সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে লিগ্যাল এইড কমিটি। হাই কোর্টের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশও মেলে। বিনা খরচে আপিল বিভাগের এ আদেশ পেয়ে এখন খুশি ৬১ বছর বয়সী রবীন্দ্রনাথ কবিরাজ।

শুধু রবীন্দ্রনাথ কবিরাজকে নন, গত ১৪ বছরে এমন প্রায় ৯ লাখ মানুষকে বিনা খরচে আইনি সহায়তা দিয়েছে জাতীয় আইনগত প্রদান সংস্থা। সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে এ বছর মার্চ পর্যন্ত ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৯২৯ জনকে সরকারি খরচে আইনি সেবা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যমে ২৫ হাজার ৯৭৭, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৮০১, ঢাকা ও চট্টগ্রামে শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেলের মাধ্যমে ২৭ হাজার ৭৩৮ এবং সরকারি সহায়তায় জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টারের মাধ্যমে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪১৩ জনকে আইনগত সেবা দেওয়া হয়েছে। জেলা লিগ্যাল এইড অফিস এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে থাকা শ্রমিক সহায়তা সেলের মাধ্যমে ১৩৪ কোটি ৯০ লাখ ২৯ হাজার ১৮০ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে বলে সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ, বিনামূল্যে আইনি সেবার দ্বার উন্মোচন’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আজ ‘জাতীয় আইনগত সতায়তা দিবস-২০২৩’ পালন করা হচ্ছে সারা দেশে। দিবসটি কেন্দ্র করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এ ছাড়া সারা দেশে জেলা পর্যায়ে র‌্যালি, আলোচনা সভা, পথ প্রচার, লিগ্যাল এইড মেলা, ক্লায়েন্ট-আইনজীবী যৌথ সভা, সেরা প্যানেল আইনজীবী পুরস্কার, ম্যাগাজিন/স্যুভেনির প্রকাশসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। পৃথক কর্মসূচি রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটিরও। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম স্বপ্ন ছিল সবার জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও সুবিচার নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০০০ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান আইন প্রণয়ন করে। এ আইনের আওতায় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাও প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে ২০০১ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে থমকে যায় এ কার্যক্রম।

আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে আবার এ কার্যক্রম শুরু হয়। সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে এ সেবা পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করছে বলেও জানান মন্ত্রী। জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে বিনামূল্যে অসহায়দের আইনি সেবা দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সরকারি আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা (লিগ্যাল এইড)। রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার অফিসসহ ৬৪টি জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বিনামূল্যে আইনি সহায়তা নিতে প্রতিদিন জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টারের ‘১৬৪৩০’ নম্বরে বা সরাসরি যোগাযোগ করছেন বিচারপ্রার্থীরা। অনেক অসহায় নারীই পুনর্বাসিত হয়ে ফিরে পেয়েছেন দাম্পত্য জীবন ও সংসার।

 

সর্বশেষ খবর