বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভালোবাসার টানে ফিরেছে কোকিলা

আলম শাইন

ভালোবাসার টানে ফিরেছে কোকিলা

স্ত্রী কোকিল

পাখির ছানাটাকে উদ্ধার করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। বালক কিছুতেই হাতছাড়া করবে না। ভয়ডর লাগানোর পরও রাজি হয়নি। বন্যপ্রাণী সম্পর্কে ওকে জ্ঞান দেওয়া মানে অরণ্যে রোদন করা। পরিশেষে কিছু টাকা হাতে দিতেই ছানাটাকে হস্তান্তর করল। ছানাটার পা থেকে রক্ত ঝরছে। মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করা হলো। খাওয়ানোর পালা এবার। খাচ্ছে না কিছুই। থেঁতলে দেওয়া ডুমুর, আঙ্গুর ফলও খায়নি। না খেয়েই কাটল দিনটা। ভোর হতেই প্রচণ্ড চেঁচামেচি শুরু করল। ক্ষুধার্ত ছানাটার সামনে পানি ভেজানো রুটি ধরতেই গপাগপ খেয়ে ফেলল। ধীরে ধীরে খাঁচায় বড় হতে লাগল ছানাটা। মাস দুয়েক পর মুক্তি দিলেও পাখিটা ফিরে যায়নি, খাঁচায় ঢুকে পড়ল। পরিশেষে অচেনা এক জঙ্গলে অবমুক্ত করে দিলেও অবাক করে তিন দিন পর পাখিটা আবার খাঁচায় ফিরে এলো ভালোবাসার টানে।

এতক্ষণ যে পাখিটার কথা বলা হয়েছে, সেটি হচ্ছে একটি মেয়ে কোকিল ছানা। দেশে গ্রীষ্মের শুরুতে এমনটি ঘটে সচরাচর। এ সময় ধূর্ত কাকের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওদের বাসায় ডিম পেড়ে নিজের বংশবৃদ্ধি ঘটানোর চেষ্টা করে কোকিল। কিন্তু ডিম ফোটার কয়েক দিন পরেই যখন কাক টের পেয়ে যায় যে ওগুলো নিজের ছানা নয়; তখনি তেড়ে যায় কাক। বেগতিক দেখে কোকিল ছানা বৃথা উড়ে পালাতে চেষ্টা করে মাটিতে ধপাস করে পড়ে যায়। সে সুবাদে দুষ্ট ছেলেদের হাতে ধরা পড়ে ওরা। অথবা বন্যপ্রাণীদের কবলে পড়ে প্রাণ হারায়। এভাবে কোকিল ছানাদের অকাল মৃত্যুর কারণে বংশবৃদ্ধিতে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটে। মানুষ একটু সচেতন হলে ছানাদের উদ্ধার করে বাঁচার সুযোগ করে দিলে প্রতি বসন্তেই শ্রুতিমধুর ‘কুহুতান’ শোনার সুযোগ হবে।

পুরুষ কোকিল

পাখির বাংলা নাম : ‘কোকিল বা কুলি’, ইংরেজি নাম : ‘এশিয়ান কুক্কু’, (Asian Koel / Asian Cuckoo)। প্রজাতির গড় দৈর্ঘ ৩৯-৪৬ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির বর্ণ কুচকুচে কালো হলেও উজ্জ্বল সবুজ আভা বের হয় শরীর থেকে। চোখের তারা টকটকে লাল (কাক-কোকিলের মধ্যে বড় তফাৎ এটি)। স্ত্রী পাখির বর্ণ কালোর ওপর বাদামি ফোঁটাযুক্ত। সমস্ত পিঠে অসংখ্য বাদামি ফোঁটা। এদের নিচের দিকটা সাদাটে বর্ণের ওপর বাদামি ফোঁটা। লেজের ওপরে সাদা ফোঁটার সঙ্গে স্পষ্ট ডোরাদাগ। উভয় পাখির ঠোঁট নীলচে-সবুজ এবং পা পায়ের পাতা কালচে।

প্রধান খাবার : ফল-ফলাদি। ফুলের মধু, খেজুরের রস এবং কীটপতঙ্গ। প্রজনন সময় মে থেকে জুন। নিজেরা বাসা বাঁধতে জানে না বিধায় পরের বাসায় ডিম পাড়ে। বিশেষ করে কাক, সাতভায়লা পাখির বাসায় ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ১-২টি।

সর্বশেষ খবর