বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

উজ্জীবিত খালেক, ব্যাকফুটে মঞ্জু মধু

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে ভিন্ন কৌশল। গতানুগতিক নির্বাচনী ধারা নেই। এর আগে খুলনার সব সিটি নির্বাচনেই মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। মাঠে সক্রিয় ছিল জামায়াতও। কিন্তু এবার বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে প্রার্থী দিচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের সামনে বড় কোনো বাধা থাকছে না। ফলে নৌকার টিকিট হাতে পেয়েই মাঠে নেমে পড়েছেন উজ্জীবিত খালেক। আগেভাগে মাঠ গোছানোর কাজে হাত দিয়েছেন। দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন কমিউনিটির সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময় করছেন।

অন্যদিকে সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে বিএনপির দ্বিধাবিভক্তির অবসান হয়েছে। সাবেক মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে নানান যুক্তি দিলেও শেষ পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে প্রার্থী হচ্ছেন না। একইভাবে জাতীয় পার্টি কেন্দ্র থেকে মেয়র পদে জেলা কমিটির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধুকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও তিনি প্রার্থী হতে আগ্রহী নন বলে জানিয়েছেন। তবে মেয়র পদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী আবদুল আউয়াল, জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফ্ফার বিশ্বাস, স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক ও তরুণ নেতৃত্বের সংগঠন আগুয়ান-৭১ এর প্রার্থী মো. আবদুল্লাহ চৌধুরী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

তফসিল অনুযায়ী খুলনা সিটি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৬ মে, বাছাই ১৮ মে, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ মে ও ভোটগ্রহণ ১২ জুন।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দলের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বলেছেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের বিকল্প নেই। তাই আবারও সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে। ভোটাধিকার প্রয়োগ প্রত্যেক ভোটারের জন্য অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হিসেবে উল্লেখ করে তিনি ভোটারদের সবাইকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু নির্বাচনের প্রাক্কালে একটি মহল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। স্বার্থান্বেষী মহলের এসব অপতৎপরতা নস্যাৎ করতে হবে।

এদিকে বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ খুলনা জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ নগর ভবনের জিআইজেড মিলনায়তনে সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় মেয়র মহানগরীর উন্নয়ন কার্যক্রমের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী মহানগরীর উন্নয়নে বিপুল অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে প্রায় দুই বছর সব রকম উন্নয়ন কাজ বন্ধ থাকায় আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি। বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে তিনি আসন্ন সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে যার যার অবস্থান থেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। খুলনায় ভোটের মাঠে বিএনপির প্রভাব থাকলেও দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না জানিয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, সিটি নির্বাচনে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমরা নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছি। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। আর মহানগর কমিটির সাবেক সভাপতি মঞ্জু বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা কোন নির্বাচনে যাব না, এটাই আমার সিদ্ধান্ত।

খুলনায় জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতারা জানান, কেন্দ্র থেকে মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধুকে মনোনীত করা হয়। কিন্তু তিনি প্রার্থী হতে আগ্রহী না হওয়ায় মহানগর সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনকে নির্বাচন করতে বলা হয়। কিন্তু তিনিও আপত্তি জানালে দুজনকে কেন্দ্র থেকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। গতকাল দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর মধুকে দলের মেয়র প্রার্থী মনোনীত করা হয়। এ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেওয়া তরুণ নেতৃত্ব আগুয়ান-৭১ এর মেয়র প্রার্থী মো. আবদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে বেহাত হওয়া অধিকার পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কেসিসি নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করছি। সিটি করপোরেশনের মূল চালিকা শক্তি শহরের নাগরিক। জনগণের অংশীদারিত্ব নিশ্চিতকরণ, জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ ও নাগরিকদের ভোগান্তি কমিয়ে নগরীর উন্নয়ন আমাদের মূল লক্ষ্য।

সর্বশেষ খবর