খুলনায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সাতজন। তাদের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এখন পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মাওলানা আবদুল আউয়াল। এরই মধ্যে তিনি ভোটের মাঠে নিরপেক্ষ পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে ঘরোয়া বৈঠকে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক এবং বিভিন্ন স্থানে ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক।
তফসিল অনুযায়ী, খুলনা সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৬ মে, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ মে ও ভোট গ্রহণ ১২ জুন।জানা যায়, বিএনপি এবার সিটি নির্বাচনে না থাকলেও আত্মতুষ্টিতে ভুগতে নারাজ আওয়ামী লীগ। এ জন্য নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ না হওয়া পর্যন্ত ঘরোয়া বৈঠকে নেতা-কর্মীদের চাঙা রাখতে চাইছেন শীর্ষ নেতারা। গতকাল ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মুসলমানপাড়া এলাকায় উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়।
এর আগে গল্লামারীর লায়ন্স স্কুল অডিটোরিয়ামে সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।
তিনি বলেন, নগরীর সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। চলমান উন্নয়ন কাজ শেষ হলে খুলনা একটি আধুনিক সুযোগ সুবিধা সংবলিত স্বাস্থ্যকর নগরীতে পরিণত হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তিনি সিটি নির্বাচনে সবার দোয়া ও সমর্থন কামনা করেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
তবে এ উন্নয়ন কাজকে অপরিকল্পিত দাবি করে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক বলেন, অধিকাংশ রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী, ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা জমে থাকে। রাস্তাঘাটে খোঁড়াখুঁড়ি চলছেই। একটা রাস্তায় ঢুকলে ওপাশ থেকে বের হওয়া যাবে কি না সন্দেহে থাকতে হয়।
তিনি গতকাল নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় (দ্বিতীয় ফেজ) মসজিদে জোহরের নামাজ শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তিনি বলেন, বিগত দিনে ভোট কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি। নির্বাচনের আগে প্রশাসনের চাপে অনেকে বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি। সরকার যদি এবার ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ততা চায়, তাহলে সেই পরিস্থিতি সরকারকেই তৈরি করতে হবে।
একইভাবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবদুল আউয়াল বলেন, পরিবেশ ভালো রাখার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা চেষ্টা করছেন। তারপরও ক্ষমতাসীন দলের অনেকের আচরণবিধি লঙ্ঘন আমরা লক্ষ্য করছি। আমরা ভোটে নিরপেক্ষ পরিবেশ ও সবার জন্য সমান সুযোগ চাই।
এটা না হলে নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আচরণবিধি অনুযায়ী কোনো মন্ত্রী ভোট চাইতে আসতে পারবেন না। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি একজন প্রতিমন্ত্রী এলাকায় এসে ভোট চাচ্ছেন। একজন মন্ত্রী যদি একটা দলের পক্ষে ভোট চান তাহলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হতে পারে না।
তিনি বলেন, গতবার সিটি নির্বাচন অস্বচ্ছ হওয়ায় আমরা বেলা ১০টায় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ভোট বয়কট করেছিলাম। গত নির্বাচনে চরমভাবে ভোট চুরি হয়েছে। এটা যদি এবারও হয় তাহলে আমরা প্রতিবাদ করব।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে তালুকদার আবদুল খালেক ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫১ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু পান ১ লাখ ৯ হাজার ২৫১ ভোট। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুজ্জাম্মিল হক ১৪ হাজার ৩৬৩ ভোট, জাতীয় পার্টির মুশফিক ১ হাজার ৭২ এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী ৫৩৪ ভোট পান।