শনিবার, ২০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

কলকাকলিতে মুখর মৌলভীবাজারের পাখিবাড়ি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

কলকাকলিতে মুখর মৌলভীবাজারের পাখিবাড়ি

অবাধে প্রকৃতি ধ্বংস এবং বন উজাড়ের ফলে সংকুচিত হচ্ছে পাখির আবাসস্থল। তাই প্রজনন আর আবাসের জন্য মানুষের বাসা-বাড়িতে ঠাঁই নিচ্ছে এসব পাখি। মৌলভীবাজারের এমন কয়েকটি বাড়িতে বাসা বেঁধেছে বক, শালিক, পানকৌড়ি, জলকুড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। সদর উপজেলার কাউয়াদিঘী হাওর পাড়ের গ্রাম বিরাইমাবাদের নুরুল ইসলাম পঙ্কি মিয়ার পাখিবাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বসতবাড়িটিতে বাঁশঝাড় ও বিভিন্ন ফলজ গাছে হাজারো পাখির কলকাকলিতে মুখর। বাড়ির চারপাশে পাকা বাউন্ডারি দেওয়া। বিশাল আঙ্গিনায় রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও বাঁশ। এসব গাছ ও বাঁশঝাড়ে এখন হাজারো পাখির কোলাহল। বাড়ির তিন দিক দিয়েই পাখির মেলা। গাছে গাছে বাসা বেঁধেছে কয়েক প্রজাতির বক, পানকৌড়ি, ধান শালিক, জলকুড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। পরম মমতায় ছানাদের আগলে রেখে খাবার খাওয়াচ্ছে মা পাখি। পাখিগুলো কখনো কখনো বাড়িটির ওপর উড়ছে, এক গাছ থেকে উড়াল দিয়ে আরেক গাছে বসছে। দেখা গেল, কিছু পাখি খুনসুটিতেও ব্যস্ত। বাড়ির লোকজন জানান, কয়েক বছর ধরে এ বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে হাজারো পাখি। ডালে ডালে পাখির বাসায় এসেছে ছানা। শীতে এসব পাখি হাওর বিলে চলে যায়, ফের বর্ষায় ফিরে আসে। তারা জানান, বাড়ির মালিক নুরুল ইসলাম পঙ্কি মিয়া একজন উদার মানুষ। পশুপাখির প্রতি রয়েছে গভীর অনুরাগ। পাখির প্রতি অকৃত্রিম মমত্ববোধ ও ভালোবাসা তার। নতুন এ বাড়িতে তিনি যখন গাছ-গাছালি লাগান, এর কয়েক বছর পর থেকেই বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আসতে শুরু করে। পঙ্কি মিয়া ভালোবাসায় পাখিগুলোকে আগলে রাখছেন। প্রথম দিকে পাখির সংখ্যা কম হলেও বছর বছর পাখির সংখ্যা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসা শুরু হয়।

নুরুল ইসলাম পঙ্কি মিয়া জানান, স্থায়ীভাবে বসবাসে পাখির বিষ্ঠার কারণে বাড়ির বিভিন্ন ফলজ বৃক্ষ এবং পুকুরের মাছের ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু পাখির ভালোবাসার কাছে সেই বিরক্তি হার মেনেছে। পাখিগুলো নিরাপদে রাখতে তিনি বাড়তি নজরদারি রেখেছেন। শিকারির হাত থেকে রক্ষার জন্য রেখেছেন লোক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বাড়ি ছাড়াও পাখির এমন আরও কয়েকটি কলোনি রয়েছে জেলায়। এর মধ্যে সদর উপজেলার শ্যামেরকোনা গ্রামের মৃত সুন্দর আলীর বাড়িটি অন্যতম। সেই বাড়িতেও রয়েছে কয়েক হাজার পাখির বসবাস। বাড়ির লোকজন পাখিগুলোতে যতেœ রাখছেন। এ বাড়িটির লোকজন জানান, সুন্দর আলী জীবিত থাকাকালীন চোরা শিকারিরা বাড়ির আশপাশে আসার সাহস করেনি। তিনি কঠোরভাবে শিকারিদের বাধা দিতেন। সেই ধারাবাহিকতায় এখন বাড়ির লোকজনের সঙ্গে প্রতিবেশীরাও পাখিদের নিরাপত্তায় সহায়তা করছেন।

স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যা হওয়ার আগ থেকেই পাখির কিচিরমিচির ও কলকাকলিতে মুখর হয় বাড়িটি। এখানে পাখির মধ্যে সাদা বকের সংখ্যাই বেশি। এ ছাড়া রয়েছে কিছু বুলবুলি, শালিক পানকৌড়ি ও বাবুই। চোরাশিকারিদের উৎপাত থাকলেও এলাকাবাসী তাদের সুযোগ না দেওয়ায় পাখিগুলো নিরাপদে আছে।

মৌলভীবাজারের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সরোয়ার জানান, পঙ্কি মিয়া ও সুন্দর আলীর পাখিবাড়ি তিনি পরিদর্শন করেছেন। পাখিগুলোর নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বনবিভাগের পক্ষ থেকে। তিনি আরও জানান, সদর উপজেলার বিরাইমাবাদ, শ্যামেরকোনা ছাড়াও সদর উপজেলার মল্লিকসরাই, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আটটি বাড়িতে কলোনি গড়েছে নানা প্রজাতির পাখি।

 

 

 

 

সর্বশেষ খবর