দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জকে কেন্দ্র করে এক সময় চলত ভোগ্যপণ্যের বাণিজ্য। প্রায় ৯০ শতাংশ ভোগ্যপণ্য আমদানি হতো এ বাজারকে ঘিরে। তাই এটি পরিচিতি পেয়েছে ‘প্রাচ্যের ওয়ালস্ট্রিট’ হিসেবে। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সংকোচিত হচ্ছে খাতুনগঞ্জ। গত দুই দশকে এ বাজারের বাণিজ্য সংকুচিত হয়েছে ৪০ ভাগ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের বৃহৎ পাইকার বাজারের ‘তকমা’ হারাবে এমন শঙ্কা ব্যবসায়ীদের। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগির আহমেদ বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমদানিকারকদের যেভাবে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। বরং বেড়েছে নানা সমস্যা। তাই বড় বড় আমদানিকারকরা বিমুখ হয়ে গেছেন খাতুনগঞ্জ থেকে। গত ১০ বছরে খাতুনগঞ্জ ছেড়েছে কমপক্ষে ৪০টি বড় শিল্প গ্রুপ। গত ২০ বছরে ব্যবসা সংকোচিত হয়েছে কমপক্ষে ৪০ ভাগ।’ তিনি বলেন, ‘খাতুনগঞ্জ রক্ষার জন্য এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’
জানা যায়, দুই দশক আগেও খাতুনগঞ্জনির্ভর ছিল দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার। চাল, ডাল, চিনি, গম, সয়াবিন তেল, পামতেল, মসলাজাতীয় পণ্যসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হতো এ বাজার ঘিরে। এ ছাড়া খাতুনগঞ্জকে কেন্দ্র করে আশপাশে ঢেউটিন, ইস্পাত পণ্য, রাসায়নিক, নিত্যব্যবহার্যসহ অনেক পণ্যের বাজার গড়ে ওঠে। ৫ হাজারের অধিক আমদানিকারক, পাইকারি এবং খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে এ বাজারে। সারা দেশের ব্যবসায়ীরা খাতুনগঞ্জে কার্যালয় খুলে ব্যবসাও করেন। দুই দশকের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জ অনেকটা নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। খাতুনগঞ্জ ছেড়েছেন ছোট বড় কয়েকশ ব্যবসায়ী। গত দুই দশকে খাতুনগঞ্জে বাণিজ্য ৯০ ভাগ থেকে নেমে হয়েছে ৫০ ভাগে।
খাতুনগঞ্জে বাণিজ্য সংকোচনের জন্য বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন ব্যবসায়ীরা। যার মধ্যে রয়েছে নৌঘাট বন্ধ হওয়া। খাতুনগঞ্জ থেকে ২৪টি নৌঘাট দিয়ে কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুরসহ ১১ জেলায় পণ্য পরিবহন হতো। অথচ বর্তমানে চালু রয়েছে দু-একটি ঘাট। যা শুধু সচল থাকে জোয়ারের সময়। জোয়ারের পানির কারণে প্রতি বছরই শত শত কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয় খাতুনগঞ্জে। তাই ব্যবসায়ীরা পণ্যের গোডাউন অন্য জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছেন। গত এক দশকে অর্ধশতাধিক অসাধু ব্যবসায়ী তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে। এ ছাড়া খাতুনগঞ্জে অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়া, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বাজারের ভেতর সীমাহীন যানজট, সরকারি ৪৩ সেবা সংস্থার কোনোটারই চট্টগ্রামে প্রধান অফিস না থাকা, আমদানি-রপ্তানিকারক দেশের সঙ্গে সরাসরি বিমান চালু না হওয়া, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেল স্থাপন, বাজারের ভেতর চাঁদাবাজি অন্যতম।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, বৃষ্টি হলে গুদামে নষ্ট হয় কোটি কোটি টাকার পণ্য। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। চাক্তাই খালের ওপর অপরিকল্পিভাবে স্লুুইসগেট দেওয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীর পানির ধারণ ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। আগে এ বাজার ঘিরে অনেক ঘাট ছিল। এখন দু একটি ঘাট সচল আছে। বাকিগুলো পলি জমে বন্ধ হয়ে গেছে।