রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে ২৬ ডিসেম্বর ব্যক্তিগত প্রয়োজনে শেরপুর যাওয়ার সময় অপহরণের শিকার হন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী কাজী হাসিবুর রহমান ওরফে হিমেল। পরিবার তার সন্ধান না পেয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি জিডি করেন। বুধবার সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে হিমেলকে উদ্ধারসহ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করে র্যাব সদর দফতর গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-১, র্যাব-৯ ও র্যাব-১৪ এর সদস্যরা। গ্রেফতাররা হলেন- অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা ও পরিকল্পনাকারী মো. আবদুল মালেক, তার অন্যতম সহযোগী ও পরিকল্পনাকারী হিমেলের গাড়িচালক সামিদুল ইসলাম, রনি নাবাল, রাসেল মিয়া ও বিল্লাল হোসেন। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ও দুটি ওয়াকিটকি সেট জব্দ করা হয়। র্যাব জানায়, হিমেলের বাবা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। চার মাস আগে বাবা মারা যাওয়ায় পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার ব্যবসা পরিচালনা করতেন হিমেল। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, অপহরণ চক্রের মূলহোতা মালেক। পরিকল্পনাকারী ছিলেন হিমেলের গাড়ির চালক সামিদুল। হিমেলের বাসায় চার বছর ধরে গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত ছিল সে। এতে ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে একটি সুসস্পর্ক তৈরি হয়। হিমেলের পারিবারিক আর্থিক ও সম্পত্তি-সংক্রান্ত বিষয়ে জানত সামিদুল। গত ১৬ ডিসেম্বর মালেকের নেতৃত্বে বাকি সদস্যরা একত্রিত হয়ে উত্তরার পাসপোর্ট অফিসের পাশে একটি জায়গায় অপহরণের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সামিদুল হিমেলকে শেরপুরে ব্যবসার কাজে নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। সে অনুযায়ী ২৬ ডিসেম্বর সকালে হিমেলকে নিয়ে শেরপুরের উদ্দেশে রওনা হন সামিদুল। গাজীপুরের সালনা পৌঁছলে চক্রের অন্য সদস্যরা ৩-৪টি মোটরসাইকেল নিয়ে হিমেলের গাড়ি গতিরোধ এবং অপহরণ করে। র্যাব মুখপাত্র কমান্ডার আল মঈন বলেন, হিমেলকে অপহরণের পর ধোবাউড়ায় তিন দিন অবস্থান করার পর চক্রের সদস্য বিল্লাল ছাড়া বাকিরা ভুক্তভোগীকে নিয়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় চলে যান। এ সময় তারা হিমেলকে নির্যাতন করতেন এবং তার ভিডিও ধারণ করে মা তহুরা বিনতে হকের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিতেন। মালেক হিমেলের মাকে বিদেশি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে ফোন করে অপহরণের বিষয়টি জানান। এরপর প্রথমে ২ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পর্যায়ক্রমে তারা ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না পেলে ভুক্তভোগীর হাত-পা কেটে ফেলা ও হত্যার হুমকি দেয়। পরে হিমেলের মা মুক্তিপণের টাকা দিতে রাজি হন। চক্রের সদস্যরা হিমেলের মাকে টাকা নিয়ে ২৩ জানুয়ারি তাহিরপুরে আসতে বলেন। হিমেলের মা বিষয়টি র্যাবকে জানান। এদিন র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-১, র্যাব-৯ ও র্যাব-১৪ এর আভিযানিক দল তাহিরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা ও পরিকল্পনাকারী মো. আবদুল মালেক ও ড্রাইভার ছামিদুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত রাতে অপহৃত ভিকটিম হাসিবুর রহমান হিমেলকে তাহিরপুর থেকে উদ্ধার করা হয় এবং রনি নাবাল, মো. রাসেল মিয়া ও মো. বিল্লাল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে, ডিবির লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, আমরা গাজীপুরের বাসন থানা এলাকা থেকে ভুক্তভোগী হিমেলের প্রাইভেটকারটি উদ্ধার করি। গাড়িটি সেখানে রেখেছিল আসামি মাসুদ। মঙ্গলবার শরীয়তপুরের গোসাইরহাট থানার প্রত্যন্ত চর থেকে আসামি মাসুদকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপহরণ চক্রান্তে জড়িত রুবিনা ও কামরুন্নাহারকে তুরাগ থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাহিরপুর থানার টাঙ্গুয়ার হাওরের মধ্যে অভিযান চালিয়ে মানিক মিয়া এবং মোবারক হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়।