রবিবার, ৫ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিরল পারুলে মাতোয়ারা পথিক

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বিরল পারুলে মাতোয়ারা পথিক

বগুড়ায় বিরল পারুল ফুলের শুভ্রতা মন কাড়ছে পথিকদের। বৈশাখের মাঝামাঝিতে ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে গাছ। পারুল ফুলের সাদা রঙে প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে। তীব্র দাবদাহের মাঝেও গাছের ডালে ফুটে থাকা এই ফুল মানুষের মনকে রাঙিয়ে তুলেছে। মাসজুড়ে পারুল ফুল সাদা পাপড়ি মেলে সৌন্দর্য বিলাচ্ছে। প্রকৃতির এমন অপরূপ সৌন্দর্যে চারদিকে আলোকিত হয়ে উঠেছে। জানা যায়, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় সরকারি নাজির আখতার কলেজে স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে থেকে বিরল প্রজাতির সেই গাছটি জানান দিচ্ছে নিজের অস্তিত্বের। পারুল গাছটিতে ফুটে আছে অসংখ্য ছোট ছোট সাদা ফুল। ফুলের সৌন্দর্যে এখন মোহিত কলেজ প্রাঙ্গণ। নতুন ফুল ফুটে কলেজের এই বৃক্ষ চত্বরকে দিয়েছে আলাদা রূপ। ফুলের গন্ধে ভ্রমর ও মৌমাছির যেমন আনাগোনা বেড়েছে তেমনি বেড়েছে সৌন্দর্যপিপাসু অসংখ্য মানুষের ভিড়। সেই মানুষগুলোই বর্ণনা করছেন পারুল ফুল নিয়ে তাদের আবেগী কথার মালা। এপ্রিল মাস থেকে জুনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সুগন্ধি ফুলের টানে হাজারো মানুষের পদভারে মুখরিত হচ্ছে নাজির আখতার কলেজ প্রাঙ্গণ। এদিকে বিরল পারুল ফুল নিয়ে আলোচনা, লেখালেখি ও গবেষণাও হয়েছে অনেক। সে লেখালেখিতে অংশ নিয়েছেন দেশবরেণ্য নিসর্গপ্রেমী দ্বিজেন শর্মা, নওয়াজেশ আহমেদ, বিপ্রদাশ বড়ুয়া, আমিরুল আলম খান, মোকারম হোসেন, জামিল আখতার বীনু ও সমুদ্র হকের মতো বিদগ্ধ ব্যক্তিরা। পারুলের বৈজ্ঞানিক শনাক্তিতে গবেষণায় অংশ নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আবুল হাসান, ড. জসিম উদ্দীন, ড. অলিউর রহমান, ন্যাশনাল হার্বেরিয়ামের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সরদার নাসির উদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. অপূর্ব কুমার রায়। তাঁদের অধিকাংশের জোরালো অভিমত- এটিই বিরল প্রজাতির পারুল। সোনাতলার কবি প্রভাষক ইকবাল কবির লেমন জানান, কবিরা আদিকাল থেকেই কাব্য রচনা করেছেন পারুলকে নিয়ে। শিল্পীরা গেয়েছেন পারুলের গুণকীর্তন করে নানা গান। কবিতা, গান ও গল্পে আমরা প্রায়ই শুনে থাকি পারুলবন্দনা। কিন্তু পাটলী, পাটলা, অমোঘা, মধুদূতী, কৃষ্ণবৃন্তা, অম্বুবাসী, অলিপ্রিয়া বা বসন্তদূতী নামের গাছটি বৃক্ষপ্রেমীসহ প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে দীর্ঘদিন ছিল অধরা। বগুড়ার সোনাতলায় পারুল ফুল এখন হয়ে উঠেছে একটি আবেগ ও অনুভূতির নাম। সোনাতলার আবু লায়েছ জানান, বিরল এই পারুল ফুল সোনাতলায় এক নতুন সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সের মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন কলেজ প্রাঙ্গণে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত মানুষের মন জয় করছে পারুল ফুল। উল্লেখ্য, কলেজের জমিদাতা মরহুম সৈয়দ নুরুল হোদা ভারতের মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর থেকে পারুলের চারাটি এনে তৎকালীন বসতভিটায় লাগিয়েছিলেন। এখন সেই গাছটির উচ্চতা ৫০ ফুট লম্বা হয়েছে। বিরল প্রজাতির পারুল গাছটি এখনো অদ্বিতীয় অবস্থানে থেকে অসাধারণ ফুলের মোহমায়ায় ও ভালোবাসায় প্রতিনিয়ত জড়াচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের।

সর্বশেষ খবর