গার্মেন্ট শিল্পে অস্থিরতা এখনো কাটেনি। এর মধ্যে গতকাল ঢাকার অদূরে সাভারে ত্রিমুখী সংঘর্ষে এক নারী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছেন গার্মেন্ট কর্মীরা। পাশাপাশি গাজীপুর, টঙ্গী, কালিয়াকৈর ও রাজশাহীতে সড়ক অবরোধ এবং বিক্ষোভ করেন তারা। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য।
সাভার : আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার মাসকট নিটস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী রেডিয়েন্স ও সাউদার্ন গার্মেন্টের শ্রমিকদের ত্রিমুখী সংঘর্ষের নারী শ্রমিক রোকেয়া বেগম নিহত হয়েছেন। গতকাল সকালে মাসকট নিটস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এলে প্রতিষ্ঠানটির মূল ফটকে কারখানা বন্ধের নোটিস দেখতে পায়। একপর্যায়ে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে কারখানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ বিশ মাইল-জিরাবো সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় শ্রমিকদের মধ্য থেকে পার্শ্ববর্তী রেডিয়েন্স কারখানায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপের অভিযোগ তুলে ওই কারখানার শ্রমিক ও স্টাফরা কারখানা ভবনের ছাদ থেকে মাসকট নিটস লিমিটেড কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ওপর পাল্টা ইট ছুড়তে থাকে। এ ছাড়া একই কারণে পার্শ্ববর্তী সাউদার্ন গার্মেন্টের শ্রমিকরাও মাসকট নিটস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকদের ওপর হামলা চালালে ত্রিমুখী সংঘর্ষে রূপ নেয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী থেমে থেমে চলা এ সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন শ্রমিক আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় পিএমকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোকেয়া বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিহতের পরিবারের উপযুক্ত সদস্যকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মাসকট কারখানা কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুর : গাজীপুরে বেতন-ভাতা পরিশোধসহ বিভিন্ন দাবিতে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও কালিয়াকৈর-নবীনগর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করেন। এতে যানবাহন আটকা পড়ে কাশিমপুরের বেক্সিমকো থেকে জিরানী পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ, আন্দোলনরত শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানায়, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রার মাহমুদ জিন্স লিমিটেড, নায়াগ্রা টেক্সটাইল লিমিটেড এবং সারাবো এলাকার বেক্সিমকো টেক্সটাইলের শ্রমিকরা বকেয়া বেতন পরিশোধ ও বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে গতকাল সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা কারখানার পার্শ্ববর্তী চন্দ্রা ও চক্রবর্তী এলাকায় কালিয়াকৈর-নবীনগর ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। এ ছাড়া নায়াগ্রা টেক্সটাইলের শ্রমিকরা গত মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে চন্দ্রা এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের একপাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে ওই সড়কে যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গাজীপুর সদরের রাজেন্দ্রপুরের তাসমিয়া হারবাল লিমিটেডের শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধিসহ আট দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছে। এদিকে বেতন বৃদ্ধিসহ প্রায় একই দাবিতে বিক্ষোভ করে ভেরিতাস ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের শ্রমিকরা।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের বেক্সিমকো জোনের সহকারী পুলিশ সুপার গোলাম মোর্শেদ জানান, শ্রমিকেরা বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়কের চন্দ্রা ও চক্রবর্তী এলাকায় সড়ক অবরোধ করলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে। শিল্পপুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
টঙ্গী : দুই মাসের বকেয়া বেতন ভাতার দাবিতে গাজীপুরা এলাকার সিজন্স ড্রেসেস লিমিটেডের শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে সড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়েন পরিবহন যাত্রীরা।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানায়, গত দুই মাসের বকেয়া বেতন ও ছুটির টাকা দেই দিচ্ছি বলে না দেওয়ার পাঁয়তারা করে আসছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। গতকাল সকালে কাজে যোগ দিয়ে বকেয়া বেতন চাইলে দিতে অস্বীকৃতি জানায় কর্তৃপক্ষ। পরে সকাল ৯টায় শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে উৎপাদন বন্ধ করে কারখানা থেকে বেরিয়ে মূল ফটকে অবস্থান নেন। পরে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরা এলাকায় সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। পরে দুপুর সোয়া বারটায় বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন।
অপরদিকে টঙ্গী ন্যাশনাল টিউব রোডের এ্যামট্রানেট গ্রুপের এক্সপোর্ট ভিলেজ লিমিটেডের আলম টাওয়ার কারখানার শ্রমিকরা টিফিন বিলের দাবিতে বিক্ষোভ করে। গতকাল সকালে উৎপাদন বন্ধ রেখে কারখানার ফটকে অবস্থান নেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
রাজশাহী : সাবেক এমপি ও এনা গ্রুপের চেয়ারম্যান এনামুল হকের মালিকানাধীন সাকোয়া ট্রেক্স সোয়েটার কারখানার দুই শতাধিক কর্মচারীর প্রায় সাত মাস ধরে বেতন বন্ধ আছে। বকেয়া বেতন পরিশোধ ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে রাজশাহী সিটি সেন্টারের সামনে গতকাল দুপুরে বিক্ষোভ করেছেন কর্মচারীরা।
কর্মচারী আমেনা জানান, তিন মাস পরপর তাদের বেতন দেওয়া হলেও গত সাত মাস ধরে তাদের বেতন বন্ধ আছে। এর ফলে সংসার খরচ ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারছেন না। গার্মেন্টের মালিক এনামুল হক কারাগারে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।