বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পোশাক খাতে সৃষ্ট শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ৪০ কোটি ডলারের উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে। প্রতিনিয়ত ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে বলে জানতে পারছি। এটি আরও বাড়বে।
গতকাল রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব, সহসভাপতি নাছির উদ্দিন, রকিবুল আলম চৌধুরী; পরিচালক শোভন ইসলাম, শামস মাহমুদ, রাজিব চৌধুরী, জাকির হোসেন, মহিউদ্দিন রুবেল, শেহরিন সালাম ঐশী, নুরুল ইসলাম, সাইফুদ্দিন সিদ্দিকী সাগর, রেজাউল আলম মিরু উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজীপুর, ঢাকার সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে পোশাক শ্রমিকরা
নানা দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। কোথাও কোথাও সড়ক অবরোধের পাশাপাশি সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। তবে এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে পোশাক খাত বর্তমানে ‘স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে’। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কিছু কার্যাদেশ (৫ থেকে ৬ শতাংশ) প্রতিযোগী দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হয়েছে। তবে বর্তমানে স্থিতিশীলতা ‘পুনরুদ্ধার হওয়ায়’ আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো আবার ফিরে আসছে। অন্যদেশে চলে যাওয়া কার্যাদেশ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ফেরত আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এ সময় বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম দেশের গার্মেন্ট শিল্প রক্ষায় ব্যাংক খাতের সংস্কার যেন উৎপাদন ও বাণিজ্যিক কর্মকান্ডে নেতিবাচক প্রভাব না রাখে বা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়- সে ব্যবস্থা করাসহ শিল্পকে ব্যবসাবান্ধব করতে যথাযথ নীতি সহায়তা প্রণয়নের বিষয়ে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানান। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে উত্থাপিত অপর দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, কাস্টমস বন্দর সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলো সহজতর ও দ্রুততর করা, চট্টগ্রাম বন্দরে লোডিং ও আনলোডিংয়ে অহেতুক সময়ক্ষেপণ বন্ধ করা, শিল্পে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা ও বিদ্যুতের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণসহ একটি টেকসই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নীতি প্রণয়ন, সব ধরনের ঋণের বিপরীতে ঋণ শ্রেণিকরণ না করা এবং পুনঃতফসিলকরণের সুযোগ দেওয়া, তৈরি পোশাক কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে জরুরি ভিত্তিতে সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের নির্দেশনা প্রদান, ঝুটসহ অন্যান্য রিসাইকেলিং উপযোগী বর্জ্য অপসারণকে বাইরের প্রভাবমুক্ত রাখা, পোশাক খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রণোদনা পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনা করা, পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি নিরাপদ এক্সিট পলিসির ব্যবস্থা করাসহ শিল্পে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কঠোর আইনের আওতায় আনতে সরকারের সহযোগিতা প্রদান। এ ছাড়া পোশাক কারখানাগুলোতে আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় বিজিএমইএর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে অর্থ উপদেষ্টাকে চিঠি দেওয়াসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগস্ট মাসের বেতনভাতা পরিশোধের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। এ সময় বিজিএমইএ সভাপতি আরও জানান, শ্রম অসন্তোষে আশুলিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৯টি পোশাক কারখানার সেপ্টেম্বর মাসের বেতনভাতা পরিশোধের ক্ষমতা ছিল না। ওই সব কারখানা যাতে বিপদে না পড়ে, সেজন্য তাদেরকে সুদহীন সহজ শর্তের ঋণ দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তিন মাস যাতে কোনো কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুতের লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা হয়, সেজন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংক সুদের হার একক অঙ্কে নামিয়ে আনারও আহ্বান জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার রফিকুল বলেন, বিজিএমইএ বোর্ডের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সরকারের নির্দেশনায় পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী গঠন হয়েছে। এ যৌথ বাহিনী গার্মেন্ট অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়মিতভাবে টহল পরিচালনা করেছে। বিজিএমইএ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কমিউনিটি পুলিশিং চালু করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঝুট সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে সরকারের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।