দেশের অপার সম্ভাবনাময় জাহাজভাঙা শিল্পের সংকট কোনোভাবেই কাটছে না। কভিড মহামারির পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, এলসি-ডলার সংকট ও সরকারের কড়াকড়ির কারণে এ শিল্পের সংকট আরও গভীর হচ্ছে। গত চার বছরে ৫০টির বেশি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে গেছে। কমে গেছে স্ক্র্যাপ (পুরনো) জাহাজ আমদানির পরিমাণ। আবার যেসব জাহাজ আমদানি করা হচ্ছে, সেগুলো কাটতে অনুমোদন নিতে বাড়তি সময় লাগার কারণে লোকসানের মুখে পড়ছেন কিছু ইয়ার্ড মালিক।
বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ)-এর তথ্য বলছে, ২০২১ সালে ২৭ লাখ টনের বেশি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এর পর থেকে জাহাজ আমদানির পরিমাণ অর্ধেকের নিচে নেমে যায়। ২০২২ সালে আমদানি হয় ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৪ টন। ২০২৩ সালে আরও কমে ১০ লাখ ২২ হাজার ১১০ টন জাহাজ আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১৩০টি জাহাজ আমদানি হয়েছে, যার ওজন ৮ লাখ টনের মতো। বাকি দুই মাসের আমদানি মিলিয়ে ১০ লাখ টনে পৌঁছার সম্ভাবনা কম।
বিএসবিআরএর সভাপতি মো. আবু তাহের বলেন, ‘এলসি ও ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশের আমদানিকারকরা আন্তর্জাতিক নিলামে বড় জাহাজ কিনতে পারছেন না। ছোট এলসি দিয়ে ছোট আকারের জাহাজ কিনতে হচ্ছে। এগুলো ওজনে কম, ৭ হাজার টনের বেশি না। এ কারণে আমদানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকতে আগামীতে আমদানির পরিমাণ আরও কমে যেতে পারে। এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে এখনই সরকারের উদ্যোগী হওয়া উচিত।’
বিএসবিআরএ সূত্র জানান, বর্তমানে ১১৬টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড কোনো না কোনোভাবে সক্রিয় হলেও সংগঠনটির প্রাথমিক অনুমোদিত ইয়ার্ড ১০৫টি। এর মধ্যে গত চার বছরে অর্ধশতাধিক শিপইয়ার্ড নানা সংকট মোকাবিলা করে এক প্রকার বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে পাঁচটি গ্রিন শিপইয়ার্ডসহ জাহাজ আমদানিতে সক্রিয় ৩৫টি শিপইয়ার্ড। আর কিছু ইয়ার্ড জাহাজভাঙা শিল্পের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সক্রিয় থেকে টিকে থাকার চেষ্টা করছে।
আমদানিকারক ও ইয়ার্ড মালিকরা বলছেন, এ শিল্পের সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে পর্যাপ্ত ডলার ও এলসির সরবরাহ না থাকা। অতীতে যখন এলসি সংকট ছিল না তখন আমদানিকারকরা বড় জাহাজের নিলামে অংশ নিতে পারতেন। বড় আকৃতির জাহাজ আমদানির পরে সামষ্টিক আমদানির পরিমাণ বেশি হতো। ফলে এসব জাহাজ কাটতে বাড়তি কর্মযজ্ঞ ছিল, প্রচুর শ্রমিক কাজ পেত। বাজারে কম দামে স্ক্র্যাপের সরবরাহ ছিল। কিন্তু এখন আমদানি কমে যাওয়ায় সব পক্ষ সংকটে পড়ছে। এর সঙ্গে জাহাজ আমদানির পর অনুমতি নিতে গিয়ে নানান ঝামেলা পোহাচ্ছেন ইয়ার্ড মালিকরা।
বিএসবিআরএর সহকারী সচিব মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজভাঙা শিল্প এখন কমলা থেকে লাল শ্রেণিতে নেওয়া হয়েছে। জাহাজ আমদানির পর ইয়ার্ডে আনা হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর অনুমতির জন্য বাড়তি সময় ব্যয় হচ্ছে। ইয়ার্ড মালিকদের ঢাকার দিকে চেয়ে থাকতে হয়। এতে স্ক্র্যাপের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বাজারে বিক্রি করে লাভ পাচ্ছেন না ইয়ার্ড মালিকরা। এসব কারণে সংকট আরও বড় হচ্ছে।’