ভারতে অবস্থান করছেন সিলেট আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সীমান্ত পেরিয়ে তারা আশ্রয় নিয়েছিলেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। এত দিন সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকলেও গত দুই দিন ধরে তাদের ঘিরে ধরেছে আতঙ্ক। রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়া এসব নেতা অবৈধভাবে অবস্থান পরিবর্তন করায় ‘অ্যাকশনে’ যাচ্ছে ভারতীয় পুলিশ। কেউ আবার জড়াচ্ছেন নানা অপরাধে। এমন অভিযোগে গত রবিবার কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন সিলেট আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের চার নেতা। জানা গেছে, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর সারা দেশে ক্ষোভের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এরপর থেকে সিলেট আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালাতে থাকেন।
সূত্র জানায়, সিলেট থেকে পালিয়ে যাওয়া কয়েক শ নেতা-কর্মী প্রথমে আশ্রয় নেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে। পরে ধীরে ধীরে তারা কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই ও চেন্নাই হয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সৌদিআরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে চলে যান। এরপরও বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা না থাকায় শিলং থেকে যান শতাধিক নেতা-কর্মী। দীর্ঘসময় ভারতে অবস্থানের জন্য তারা সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে সে দেশের সরকার তাদের শর্ত সাপেক্ষে শিলংয়ে অবস্থানের অনুমতি দেয়। শর্তের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ে আশ্রয়প্রার্থীদের স্থানীয় পুলিশের কাছে রিপোর্ট করার। অনুমতি ছাড়া তারা শিলংয়ের বাইরে যেতে পারবেন না। কিন্তু এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী শিলং থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, ঝাড়খ ও দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে চলে যান। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বাসা ভাড়া নিয়ে আশ্রয় নেন অনেক নেতা। ফলে নিয়মিত রিপোর্ট না পেয়ে শিলং পুলিশ তাদেরকে খুঁজতে থাকে। তাদের নামে থানায় সাধারণ ডায়েরিও হয়।
ভারতে অবস্থানরত কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, নেতাদের কেউ কেউ সেখানে আইনলঙ্ঘন করে অপরাধমূলক কর্মকাে ও জড়িয়েছেন। কেউ কেউ মদ খেয়ে মাতাল হয়ে স্থানীয় লোকজন ও পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। এসব ঘটনায় পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগও হয়েছে। ভারত সরকারের নমনীয়তার কারণে কেউ কেউ সেখানে উগ্র আচরণও করছেন। যা অন্যদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছে।
এদিকে গত রবিবার রাতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, মহানগরের সদস্য ইলিয়াছ আহমদ জুয়েল, মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি ও সহসভাপতি আবদুল লতিফ রিপনকে গ্রেপ্তার করে সেখানকার পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে বিনা অনুমতিতে অবস্থান পরিবর্তন ও মেঘালয়ের ডাউকিতে ফৌজদারি অপরাধের মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে শিলং পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর সিলেটসহ সারা দেশে প্রচার হয়, ধর্ষণ মামলায় ওই চার নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে মেঘালয় পুলিশ নিশ্চিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগে কোনো মামলা নেই। মেঘালয় পুলিশের মহাপরিচালক ইদাশিশা নংরাং জানিয়েছেন, ‘গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে ডাউকি থানায় তাদের বিরুদ্ধে ন্যায় সংহিতার চারটি ধারা এবং বিদেশি আইনের ১৪ নম্বর ধারায় অভিযোগ রয়েছে।’ সূত্র জানিয়েছে, ডাউকিতে এক ট্রাকচালকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও মারধরের ঘটনায় ওই চারজনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা হয়। এ ছাড়া অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে শিলং ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান নেওয়ার ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। এই দুই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে ওই চার নেতা গ্রেপ্তারের পর সিলেট থেকে পালিয়ে যাওয়া নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এতদিন যারা বিনা অনুমতিতে অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়টিকে আমলে নেননি তাদের কেউ কেউ মঙ্গলবার কলকাতা থেকে শিলং ফিরে এসেছেন। অবৈধভাবে অবস্থান পরিবর্তনের জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়েছে কি না সে খোঁজ নিতে শুরু করেছেন তারা।