দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে নতুন রূপে আবির্ভাব হয়েছে বাজার কারসাজি সিন্ডিকেট। তারা রমজান মাস সামনে রেখে অতিপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য ছোলা, মটর, পিঁয়াজসহ নানান ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে চলেছে। এরই মধ্যে কোনো কোনো পণ্যের দাম কেজিপ্রতি কয়েকগুণ বেড়েছে।
ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন এ বিষয়ে বলেন, ‘বিগত দু-এক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে রমজান শুরু হওয়ার দুই তিন মাস আগে রমজানের অতিপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম কোনো কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়। রমজান এলে সামান্য পরিমাণ কমানো হয়। যাতে সাধারণ চোখে মনে হয় ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে।
এ বছরও অভিন্ন কায়দায় সক্রিয় হয়েছে সিন্ডিকেট। তাদের কারসাজির কারণেই ঊর্ধ্বগতিতে রয়েছে ভোগ্যপণ্যের বাজার।’ তবে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন দাবি করেন, ‘আমদানি করা পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণই হচ্ছে ডলারের ঊর্ধ্বগতি। আগস্ট মাসে এলসি করতে ডলারপ্রতি খরচ হতো ১১৮ টাকা। বর্তমানে তা কিনতে হচ্ছে ১২৩ টাকা ৫০ পয়সায়। ফলে আমদানি ব্যয় ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডলারের ঊর্ধ্বগতির জন্যই রমজানের অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনেকাংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা চাইলেও কম দামে পণ্য বিক্রি করতে পারবেন না।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর রমজান শুরু হওয়ার তিন থেকে চার মাস আগ থেকেই অতিপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের আমদানি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। রমজানের অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নাগালের মধ্যে রাখতে ছোলা, মটর, পিঁয়াজ, ভোজ্য তেলসহ ১১ ধরনের পণ্য আমদানিতে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এ সুবিধা গ্রহণ করেই এবারও অনেক আমদানিকারক প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলেছেন। গুদামে মজুতও করেছেন। সরবরাহ নিশ্চিত এবং মূল্য নাগালের মধ্যে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে নানান পদক্ষেপ নেওয়া হলেও উল্টো পথে হাঁটছে রমজানের অতিপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম। জানা গেছে, খাতুনগঞ্জের সিন্ডিকেট নতুন রূপে আবির্ভাব হয়ে রমজান শুরু হওয়ার তিন মাস আগে থেকেই বাজার কারসাজির মাধ্যমে বৃদ্ধি করছে অতি প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের দাম। দেশের অন্যতম পাইকার বাজার খাতুনগঞ্জের রমজানের নিত্যপণ্যের তুলনামূলক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রমজানের অতি প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম কেজিপ্রতি সর্বনিম্ন ছয় টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল প্রতি মণ অস্ট্রেলিয়ান ছোলা বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ টাকায়। কেজি হিসেবে এর দাম বেড়েছে ১১৭.৮৯ টাকা। গত বছর একই সময়ে এগুলো বিক্রি হয়েছে ৮৪ টাকায়। মোটা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯৬ টাকা। গত বছর যা ছিল ৯০ টাকা। চিকন মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায় গত বছর বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা। প্রতি কেজি খেসারি ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। গত বছর বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা। মটর ডাল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। গত বছর বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। চিকন মুগ ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। গত বছর বিক্রি হয়েছে ১০৫ টাকায়। প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৩০০ টাকা। কেজি হিসেবে দাম পড়ছে ১১৫.২১ টাকা। গত বছর বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ‘খাতুনগঞ্জ কেন্দ্রিক কারসাজি সিন্ডিকেট ভাঙতে আমরা নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। বৃদ্ধি করা হয়েছে বাজার মনিটরিং। চালানো হচ্ছে অভিযান। আশা করছি কারসাজি সিন্ডিকেট এবার সফল হতে পারবে না।’