পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যতো বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন, কখনো কারো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না। সে আমার দলের (আওয়ামী লীগের) নেতা হলেও সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। নির্যাতিত মানুষের পক্ষে থাকবেন, জনকল্যাণে কাজ করবেন।
আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ নির্দেশনা দেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের কল্যাণ, জনগণের মঙ্গলই আমাদের সরকারের মূল লক্ষ্য। আর সেটি করতে হলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখতে হবে। সে দায়িত্ব সার্বিকভাবে পুলিশের ওপরই পড়ে। গ্রামগঞ্জে কিছু দুর্বল লোক যাদের ওপর প্রভাবশালীরা নানাভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাব ঘাটিয়ে অত্যাচার করে। এমনকি আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করেও যদি কউ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর প্রভাব খাটায়, ছাড় দেবেন না।
পুলিশকে মানুষের আস্থা অর্জনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের ভেতরে আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টি করুন। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুন। সকালের বেতনভাতা আমরা বাড়িয়েছি। বলা যায় অস্বাভাবিক হারে বেতনভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ যেন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সেজন্য তাদের সে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার। সরকার সেসব ব্যবস্থা করেছে। কোথায় কি করতে হবে, সেটা আমরা জানি। তাই সরকারের কাছে কোনো দাবি করতে হয় না। দাবি ওঠার আগেই তা পূরণ করি। পুলিশের বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছি। ঝুঁকিভাতার প্রচলন করেছি। কল্যাণ ফান্ড গঠন করেছি। রেশন বাড়িয়েছি। নতুন নতুন থানা ও ব্যারাক নির্মাণ করেছি। রাজারবাগে ১০ তলা বিল্ডিং করেছি। পুলিশের জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন সংগ্রহ করেছি। আমাদের কার্যকর পদক্ষেপের ফলে অনেক দূর এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ পুলিশ।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ছাড়াও বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের হরতাল-অবরোধের নামে নৃশংসতা মোকাবিলা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থীদের দমনে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাসহ গুরুত্বপূর্ণ বোমা হামলা মামলার তদন্তেও পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন আপনারা। আপনাদের ভূমিকায় জুয়া-চোরাচালান, নারী ও শিশু চালান আমরা বন্ধ করতে পেরেছি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ইতোপূর্বে আমরা আইজিপি’র র্যাংক ব্যাজ পুনঃপ্রবর্তন করেছি। আইজিপি’র পদ ছাড়া পুলিশে আরও ২টি গ্রেড-১ পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। ব্যাপক পদোন্নতি দিয়েছি। রংপুর রেঞ্জ, রংপুর রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স, দু’টি র্যাব ব্যাটালিয়নসহ আমরা বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট স্পেশাল সিকিউরিটি প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন (এসপিবিএন), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, গঠন করেছি। আমরা ৩১টি নতুন থানা ও ৭০টি তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন করেছি। থানাগুলোতে প্রয়োজনীয় জনবল এবং বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা পদায়ন করা হচ্ছে। পুলিশের আবাসন, অফিসের স্থান সংকট নিরসনে আমরা পদ¶েপ নিয়েছি। আগে আমাদের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমš^য় ছিলো না। এখন সেই সংস্থাগুলোর মধ্যে সমš^য় করতে পেরেছি। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পুলিশের সমস্যা সমাধাণ ও বিভিন্ন দাবির প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বেশি ঘরের মধ্যে ঘর সৃষ্টি করতে চাই না। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে ভাগ করার চিন্তা ভাবনা চলছে। কয়েকটি বিভাগ করে সচিবকে দায়িত্ব দেয়ার পরিকল্পনা হচেছ। এয়ারপোটে পুলিশের নিজস্ব সিকিউরিটি করার প্রস্তাবের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বিমানবন্দরের সিকিউরিটি যদি না বাড়াই তাহলে আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের বিমান পাঠাতে পারবো না। আগামীতে লন্ডনও যেতে পারবে না আমাদের বিমান। এমনিতে যুক্তরাষ্ট্রে এখনো যেতে পারে না। তাই বিমানবন্দরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গেলে অনেক কিছু করতে হবে। এখানে এক বিভাগের দায়িত্ব দেয়া যাবে না। সবার সঙ্গে সমন্বয় করেই সেটা করতে হবে। আমরা চাই আন্তর্জাতিক মানের বিমান বন্দর হোক।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক, আইজিপি একেএম শহিদুল হক, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, রাজশাহী রেঞ্জের ডিজি ইকবাল বাহার, ঢাকা বিভাগীয় ডিআইজি মোখলেচুর রহমান, ঢাকার এসপি হাবিবুর রহমান, নরসিংদী জেলার এসপি আমেনা বেগম বক্তৃতা করেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৭ জানুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা