রেলপথ মন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, বাংলদেশ রেলওয়ের সাথে ভারতের রেলওয়ের সংযোগের জন্য মোট ৯টি ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট হচ্ছে। এর মধ্য ৪টি চালু আছে, তিনটি বন্ধ ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন আরও দুটি ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট চালুর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধূরীর সভাপতিত্বে সোমবার একাদশ সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্ব আলী আজমের (ভোলা-২) লিখিত প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী এসব তথ্য জানান।
মন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ রেলওয়ের সাথে ভারতের রেলওয়ের ৪টি চালু পয়েন্টের মধ্যে রয়েছে দর্শনা (বাংলাদেশ)- গেদে, বেনাপোল (বাংলাদেশ)-পেট্টাপোল (ভারত), রোহনপুর (বাংলাদেশ)-সিঙ্গাবাদ(ভারত), বিরল (বাংলাদেশ-রাধিকারপুর (ভারত) ।
ঢাকা শহরের চারদিকে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে :
নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের (ভোলা-৩) অপর প্রশ্নের জবাবে রেলপথ মন্ত্রী জানান, ঢাকা শহরের চতুর্দিকে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের জন্য একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রস্তাব ২০১৭ সালে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেছে। সে অনুযায়ী পরামর্শক নিয়োগের জন্য গত বছর দ্বিতীয়বার ইওআই আহ্বান করা হয় এবং পরামর্শক নিয়োগের নেগোসিয়েশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সমীক্ষা কার্যক্রম শেষে সমীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে, যা ঢাকার যানজট নিরসনে নতুন মাত্রা সংযোজন করবে।
তিনি আরও জানান, গত ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ১৯ শতাংশ।
দ্রুত গতির রেল রুট চালুর উদ্যোগ :
নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের (ভোলা-৩) সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, ঢাকা থেকে সিলেট এবং ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত দ্রুত গতির রেল রুট চালুর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে রেলওয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে এ রুটের সম্ভাব্যতা যাচাই করার কাজ চলছে। আশাকরি সম্ভাবতা যাচাই শেষ হলে আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে দ্রুত গতির রেল লাইন চালু করতে পারবো।
এসময় তিনি জানান, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এডিপিতে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর জন্য মোট ১১ হাজার ৩৩১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
রেলমন্ত্রী জানান, বর্তমানে দেশে ৪৪টি জেলায় রেল নেটওয়ার্ক রয়েছে। আরও ১৫টি জেলা (মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, মেহেরপুর, মাগুরা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, বান্দারবান, কক্সবাজার, নড়াইল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালি, মানিকগঞ্জ , পিরোজপুর এবং বরগুনা) রেল নেটয়োর্কের আওতায় আনা হবে।
বন্ধ থাকা রেল লাইন চালুর প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী জানান, কালখালি-টিয়াপাড়া, বিরল-রাধিকাপুর, কুলাউড়া-শাহবাজপুরসহ দেমেল আরও কয়েকটি বন্ধ হওয়া রেলপথ চালু করার কাজ চলছে। একইসঙ্গে তিনি জানান, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত রেলের উন্নয়নে মোট ১ লাখ ৮ হাজার ৬১৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬৪ টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। ৩৩০.১৫ কি.মি. নতুন রেললাইন নির্মান এবং ১১৩৫.২৩ কি মি. রেলপথ পূণর্বাসন করা হয়েছে। ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত ৬৪.৭৫ কিমি রেলপথ, ঈশ্বরদী থেকে ঢালার চর পর্যন্ত ৭৮.৮০ কিমি রেলপথ নির্মান কাজ চলছে।
এ ছাড়া প্রায় ১৩টি নতুন রুটে রেল চালানোর জন্য ভিজিবিলিটি টেস্ট করার জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প :
একই প্রশ্ন কর্তার অপর এক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী সুজন জানান, পদ্মা সেতু রেল পথ নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট চীনের সরকারি কোম্পানি চায়না রেলওয়ে গ্রুপের সঙ্গে নির্মাণ কাজের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চায়না এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পের অর্থায়ন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালান সম্ভব হবে বলে জাানন মন্ত্রী।
তিনি আরও জানান, পদ্মা সেতু রেল সংযোগের আওতায় ১০০টি বিজি কোচ সংগ্রহ প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থায়নে ২০টি, এডিবির অর্থায়নে ১০টি এবং সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় ৭০টি এমজি লোকেমোটিভ সংগ্রহ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম