জাহালম এখন দেশের আলোচিত নাম, যিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ভুল মামলায় বিনা দোষে তিনটি বছর কাটিয়েছেন জেলখানায়।
জেলে যাওয়ার পর তার স্ত্রী কল্পনা আক্তার ও একমাত্র শিশু কন্যার তিনটি বছর কেটেছে চরম অনিশ্চয়তা, দুশ্চিন্তা, হতাশায়।
জাহালম জেলখানায় থাকলেও তার জন্য কিছু খরচ লাগতো সেখানে। প্রায় প্রতি মাসে ৫শ’ করে টাকা পাঠাতে হতো। সেই খরচ, জাহালমের অনুপস্থিতিতে নিজ সংসার খরচ সব মিলিয়ে তার স্ত্রী কল্পনা আক্তার ছিলেন চরম হতাশাগ্রস্ত।
স্বামী হঠাৎ জেলে যাওয়ায় তার মাথায় চাপে অনেক দায়িত্ব। সেজন্য জাহালম গ্রেফতার হওয়ার ৬ মাস পর একটা চাকরি নিতে বাধ্য হন কল্পনা। সেজন্য একমাত্র আদরের শিশুকন্যাটিকেও নানির কাছে রেখে আসতে বাধ্য হন কল্পনা। হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন নরসিংদীর প্রাণ কোম্পানিতে।
সাংবাদিকদের কাছে নিজের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন কল্পনা। তিনি বলেন, ‘গত তিন বছরে মামলা চালাতে বিভিন্ন এনজিও ও স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। বর্তমানে তার ১০টি এনজিওতে সাপ্তাহিক কিস্তি দিচ্ছি। ঋণ পরিশোধ করতে এখন ভিটেবাড়ির ১০ শতাংশ জায়গা বিক্রি ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আমাদের।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় জাহালমকে দুদকে হাজির হতে বলা হয় দুদকের দেওয়া চিঠিতে। জাহালম সেসময় নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুটমিলে শ্রমিকের কাজ করছিলেন। যথাসময়ে দুদকে হাজিরা দিয়ে জাহালম আবার তার নরসিংদীর জুটমিলের কর্মস্থলে চলে যান। এর দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর ঘোড়াশালের ওই জুটমিল থেকে জাহালমকে গ্রেফতার করা হয়।
পরে জাহালমকে নাগরপুর থানায় আনা হয়। পরদিন টাঙ্গাইলের আদালতে তাকে তোলা হলে জেলখানায় পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। ৭ দিন টাঙ্গাইল কারাগারে রাখার পর তাকে কাশিমপুর-২ কারাগারে নেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি ৩ বছর সেখানে কারাবন্দি ছিলেন।
ভুল মামলায় তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নজরে আসায় রবিবার হাইকোর্ট তাকে কারামুক্তির নির্দেশ দেন। ওই দিন মধ্যরাতে তাকে মুক্তি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
বিডি প্রতিদিন/কালাম