নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের দ্বারা পরিচালিত জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেমসি) মসজিদের সামনের রাস্তার নামকরণ করা হলো ‘জেএমসি ওয়ে’। ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সকল জাতি-ধর্মের মানুষদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবানের পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলায় নিহত মুসল্লিদের স্বজনের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে এ নামকরণ করা হয়।
মার্কিন কংগ্রেসের দুই প্রভাবশালী সদস্য, নিউইয়র্ক সিটির পুলিশ কমিশনার, নিউইয়র্ক স্টেটের এ্যাসেম্বলিমান, সিটি কাউন্সিলম্যান ছাড়াও এ অনুষ্ঠানে ছিলেন ধর্মপ্রাণ মানুষেরা।
১৫ মার্চ শুক্রবার বাদ জুমআ বহুৃল প্রত্যাশিত ‘জেএমসি ওয়ে’র নামফলক উন্মোচনের অনুষ্ঠানটি এক পর্যায়ে পরিণত হয় নিউজিল্যান্ড মসজিদে নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ সমাবেশে।
ডেমক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কমিটির ভাইস চেয়ার ও কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং তার বক্তব্যে বলেন, মসজিদে নামাজরত মুসল্লিগণের ওপর হামলার মধ্যে বীরত্বের কিছু থাকতে পারে না। এটি সভ্য জগতে সবচেয়ে বর্বরোচিত আচরণ। ঐ হামলায় হতাহতদের গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং এহেন নৃশংসতা/সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিটি বিবেকসম্পন্ন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান রাখছি।
জ্যামাইকা নিয়ে গঠিত নির্বাচনী এলাকার এই কংগ্রেসওম্যান আরো বলেন, ‘আমরা এ ধরণের জঘণ্য অপকর্মের কাছে কখনো মাথানত করবো না। আমরা ভীত নই। আমরা আরো সাহসের সাথে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। একইসাথে আমি এই মসজিদের কর্মকর্তাগণকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, ধর্মপ্রাণ মানুষদের সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ রেখে এই সিটি তথা যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখার পরিবেশ তৈরী করার জন্যে।’
কংগ্রেসে ফরেন এফেয়ার্স কমিটির প্রভাবশালী সদস্য এবং জ্যামাইকার পার্শ্ববর্তী এলাকা নিয়ে গঠিত কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-এর কংগ্রেসমান গ্রেগরী মিক্সও একইভাবে নিউজিল্যান্ড মসজিদে বর্বরোচিত হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘জেএমসি ওয়ে নামফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে আমরা ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক মনোভাবকে যে প্রশ্রয় দেইনা, সে কথার জানান দিচ্ছি। সকল ধর্ম, বর্ণ এবং জাতিগোষ্ঠির মানুষের সমান অধিকার রয়েছে নিরাপদে দিনাতিপাত করার। এ ব্যবস্থা সোচ্চার রাখতে আমাদেরকে সবসময় যে কোন ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কমিশনার জেমস ও ’নীল বলেন, ‘নিউইয়র্কের সকল মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, সিনগগের নিরাপত্তায় আমরা বদ্ধপরিকর। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অটুট রাখতে আমাদের পুলিশ অফিসারেরা প্রতিটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে কাজ করেন। এতদসত্বেও সকলের প্রতি অনুরোধ রাখছি চোখ-কান খোলা রাখতে। কারণ, দুষ্ট লোকদের কোন ধর্মজ্ঞান নেই। ওরা সভ্যতার শত্রু, মানবতার দুশমন। তাই ওদেরকে প্রতিহত করতে সকলের সচেতণ থাকার প্রয়োজন রয়েছে।’
জেএমসি পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় মসজিদ প্রাঙ্গনে শতশত মানুষের উপস্থিতিতে নামফলক উন্মোচনের এ অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন স্টেট এ্যাসেম্বলীম্যান ডেভিয ওয়েপ্রিন, সিটি কাউন্সিলম্যান কস্টা কন্সট্যান্ডিনাইটস এই নামকরণের মধ্যমণি সিটি কাউন্সিলম্যান ররি ল্যাঙ্কম্যান। অনুষ্ঠানে সকলকে স্বাগত জানান জেএমসির প্রেসিডেন্ট ডা. সিদ্দিকুর রহমান। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ইমাম শামসী আলী।
আলোচনার পরই সর্বস্তরের প্রবাসীকে পাশে নিয়ে বিপুল করতালির মধ্যে মসজিদের সম্মুখের রাস্তা ১৬৮ স্ট্রিটের নাম পরিবর্তন করে ‘জেএমসি ওয়ে’ নামফলক উন্মোচন করেন কাউন্সিলম্যান ররি ল্যাঙ্কম্যান।
উল্লেখ্য, বহুৃবছর ধরেই এ নিয়ে দেন-দরবার চলছিল। সেই স্বপ্নেরই বাস্তবায়ন ঘটলো ১৫ মার্চ। এজন্যে জেএমসি তথা মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে জেএমসি সেক্রেটারি মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী সিটি প্রশাসনের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান।
উল্লেখ্য যে, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের ব্যবস্থাপনায় সাম্প্রতিক সময়ে নিউইয়র্ক সিটিতে ৩০ সহস্রাধিক মুসল্লির অংশগ্রহণে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুক্রবার জুমআর নামাজেও কয়েক হাজার মুসল্লির সমাগম ঘটে। এরফলে মূলধারার লোকজনও এই মসজিদের মাধ্যমে বাংলাদেশি তথা মুসলিম কমিউনিটিতে তাদের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ নিচ্ছেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন