‘নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যদি ইতিহাস জানতে না পারে, তাহলে তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবে না এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তো এখনই প্রায় একশো বছরের পুরোনো। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের গান্ধী হত্যার পরেও প্রায় পঁচাত্তর বছর কেটে গেছে। ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়ার এই যে খেলা শুরু হয়েছে- সেখানে নাথুরাম গডসে দেশদ্রোহী নয়, দেশভক্ত’-এমন মন্তব্য করলেন ড. পার্থ ব্যানার্জি।
নিউইয়র্ক থেকে আসা মানবাধিকার সংগঠক পার্থ ব্যানার্জি পূর্ব লন্ডনের বাংলাটাউনে অবস্থিত লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবে ১৫ ফেব্রুয়ারি মুজিববর্ষ কাউন্টডাউন উপলক্ষে যুক্তরাজ্য একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক ও শেখ মুজিব’ শীর্ষক সেমিনারে অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন।
ড. পার্থ, যিনি একাধারে মানবাধিকার কর্মী, লেখক, শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যম সমালোচক এবং সংগীতশিল্পী মহান নেতার এই বিশেষ শতবর্ষ পূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়া এবং বিকৃতকরণের খেলা চলেছে। একশ্রেণীর তথাকথিত বুদ্ধিজীবী প্রকাশ্যে ও গোপনে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির সঙ্গে ওঠাবসা করেন, তাদের মিটিং সমাবেশে বক্তৃতা দেন।
তিনি আরও বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির ইতিহাস -পালরাজাদের বাংলা থেকে শ্রীচৈতন্যের বাংলা থেকে রবীন্দ্র-নজরুল-বিভূতিভূষণের বাংলা থেকে লালন-সিরাজের বাংলা আজ নতুন প্রজন্মের বাঙালির মন থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং বাংলা ভাষা রক্ষার ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল আন্দোলন ও আত্মত্যাগের ইতিহাস সেই সময়েও যেমন আমাদের জানতে দেওয়া হয়নি, তেমনই এখনও পশ্চিমবঙ্গের এক বিরাটসংখ্যক মানুষের কাছে তা অজ্ঞাত, এবং গৌণ।
শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষ পালনের বছরে দুই বাংলা যেমন এই মহান নেতাকেও স্মরণ করবে, তেমনি তার সঙ্গে সঙ্গে দুই বাংলার এই দুই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ও তাদের নেতা ও নেত্রীদের এবং অসংখ্য নামহীন খ্যাতিহীন শহীদেরকেও স্মরণ করে-উল্লেখ করেন পার্থ ব্যানার্জি। আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের এই শুভক্ষণে আমরা যেন দুই বাংলার ও বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস ভুলে না যাই।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি নূরউদ্দিন আহমেদ এবং পরিচালনা করেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক জামাল খান। আলোচনায় অংশ নেন- বঙ্গবন্ধু পরিষদের সেলিম উল্লাহ, নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা হুসেনেরা মতিন, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ওয়ালিউর রহমান, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের আবদুল আহাদ চৌধুরী, ড. অমিত মুখোপাধ্যায়, প্রেসক্লাবের নাজমুল হুসেন, নির্মূল কমিটির কাউন্সিলর মঈন কাদরী, সহ-সম্পাদক স্মৃতি আজাদ, তোফাজ্জল হুসেন, লন্ডন মহানগর আওয়ামী লীগের সৈয়দ গোলাব আলী, শায়ক আহমেদ এবং সাংবাদিক তানভীর আহমেদ।
উল্লেখ্য, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমবঙ্গের সন্তান পার্থ ব্যানার্জি তার সহপাঠিদের সাথে শরণার্থী শিবিরে নানা কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ছিলেন। সেই থেকেই বাংলাদেশের বাঙালিদের এগিয়ে চলার সাথে নিজেকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রেখেছেন।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম
