একটু ধৈর্য নিয়ে ব্যাটিং করলে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরিটা করতে পারতেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু হঠাৎ ধৈর্যহীন হয়ে পড়েন। রবীন্দ্র জাদেজাকে উড়িয়ে মারতে যেয়ে শর্ট থার্ডম্যানে জশপ্রীত বুমরাহর তালুবন্দি হন। টাইগার অধিনায়ক থেমে যান ব্যক্তিগত ৮২ রানে। নাজমুল তিন অংকের জাদুকরী ইনিংস খেললেও বোধহয় হার এড়াতে পারত না বাংলাদেশ। চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের লাল মাটির উইকেটে যাচ্ছেতাই ব্যাটিংয়ে টেস্টটি টাইগাররা হেরেছে ২৮০ রানের আকাশসমান ব্যবধানে। যা ভারতের বিপক্ষে রানের হিসাবে সবচেয়ে বড় হার। ২০১৭ সালে হায়দরাবাদে টাইগাররা হেরেছিল ২০৮ রানে। চেন্নাইয়ে হারের পরও ইতিবাচক দিক খুঁজে পেয়েছেন টাইগার অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘ইতিবাচক দিক হচ্ছে, হাসান-তাসকিন-রানা প্রথম ২-৩ ঘণ্টা যেভাবে বোলিং করেছে, সেটাই প্রাপ্তি। ভারত অবশ্যই খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। পেস বোলিংই এখানে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। শেষ কয়েকটি সিরিজে নতুন বলে আমরা খুবই ভালো করেছি। এটি খুবই দারুণ ব্যাপার। কিন্তু আমাদের সেটা ধরে রাখতে হবে।’
পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ তাদের মাটিতে। প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে নাজমুল বাহিনী ভারত উড়ে যায়। সফরে চেন্নাই ও কানপুরে দুটি টেস্ট খেলবে। শিডিউল অনুযায়ী চেন্নাই টেস্ট আজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৫ সেশনের টেস্ট শেষ হয় ১০ সেশনে। হারের পরও টাইগার অধিনায়ক ইতিবাচক দিক যেমন খুঁজে পেয়েছেন, তেমনি চেন্নাইকে পেছনে ফেলে এখন কানপুর টেস্টের দিকে নজর দিচ্ছেন টাইগার অধিনায়ক। বাংলাদেশ এই প্রথম চেন্নাইয়ে টেস্ট খেলেছে। যদিও এর আগে চিদাম্বরমে ওয়ানডে খেলার রেকর্ড রয়েছে। কানপুরেও প্রথমবার কোনো ম্যাচ খেলবে। টাইগার অধিনায়কের এখন পুরোপুরি নজর কানপুরের দিকে। তিনি বলেন, ‘চেন্নাইয়ে আমরা চেষ্টা করেছি যতক্ষণ সম্ভব ব্যাটিং করে যেতে। ফলের কথা না ভেবে নিজেদের শক্তি অনুযায়ী খেলে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কানপুর টেস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চেন্নাইয়ে আমাদের বোলাররা ভালো করেছে। আশা করি, এবার ব্যাটাররাও ভালো করবে।’ নাজমুল বাহিনী আজ চেন্নাই থেকে কানপুর যাবে।
চেন্নাইয়ে টাইগারদের সুখস্মৃতি বলতে শুধু প্রথম দুই সেশন। হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ ও নাহিদ রানা দুর্দান্ত বোলিং করেন। ওই দুই সেশনে ১৪৪ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ভারতকে খাদের কিনারায় ঠেলে দেন। সেখান থেকে রবীচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা ১৯৫ রানের জুটি গড়ে দলকে টেনে নিয়ে যান। অশ্বিন খেলেন ১১৩ রানের ইনিংস এবং জাদেজা ৮৫ রান করেন। হাসান প্রথম টাইগার পেসার হয়ে টানা দুই টেস্টে ৫টি করে উইকেট নেন। তাসকিন নেন ৩ উইকেট। বাংলাদেশ অলআউট হয় ১৪৯ রানে। টেস্টের দ্বিতীয় দিন উইকেটের পতন হয় ১৭টি। তৃতীয় দিন ঋষভ পান্ত ও শুভমান গিলের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৪ উইকেটে ২৮৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। গিল ১১৯ ও পান্ত ১০৯ রানে অপরাজিত থাকেন। নাজমুল বাহিনীকে রোহিত বাহিনী টার্গেট দেয় ৫১৫ রানের।
১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে পাঁচ শ বা তার চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই। চার শ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড রয়েছে সাকল্যে ৪টি। এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ভারতের রয়েছে চার শ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। সবচেয়ে বেশি ৪১৮ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ৪১৩। ভারতের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ৩০১, ৭৫.২ ওভারে। ৫১৫ রানের টার্গেটে ২৩৪ রানে অলআউট হয়। গতকাল নাজমুলরা শেষ ৬ উইকেট হারায় মাত্র ৪০ রানের ব্যবধানে ১০.৩ ওভার বা ৬৩ বলের মধ্যে! আগের দিনের ৪ উইকেটে ১৫৮ রান নিয়ে খেলতে নেমে অলআউট হয় ২৩৪ রানে। প্রথম ইনিংসে ১৪৯ রান করেছিল টাইগাররা। ভারত প্রথম ইনিংসে ৩৭৬ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ২৮৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। হাফ সেঞ্চুরি করেন নাজমুল। দ্বিতীয় ইনিংসে ৮২ রান করেন ১২৭ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায়। নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার অধিনায়ক বলেন, ‘ব্যাটার হিসেবে আমি সব সময় অবদান রাখার চেষ্টা করি। নিজের ব্যাটিং উপভোগ করার চেষ্টা করি।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত প্রথম ইনিংস : ৩৭৬/১০ ও দ্বিতীয় ইনিংস : ২৮৭/৪ ডি. ৬৪ ওভার (শুভমন ১১৯, রিশাভ ১০৯, মিরাজ ২/১০৩)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১৪৯/১০ ও দ্বিতীয় ইনিংস : ২৩৪/১০, ৬২.১ ওভার (নাজমুল ৮২, সাদমান ৩৫, অশ্বিন ৬/৮৮, জাদেজা ৩/৫৮)
ফল : ভারত ২৮০ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : রবীচন্দ্রন অশ্বিন