১৯ জুলাই, ২০২১ ২২:৩৭

প্রযুক্তি ও গ্রাহক সেবার জন্যই শাওমি এখন শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড

আবু জাফর

প্রযুক্তি ও গ্রাহক সেবার জন্যই শাওমি এখন শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড

শাওমি বাংলাদেশের কান্ট্রি জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন চৌধুরী

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ড শাওমি সম্প্রতি বিক্রির ক্ষেত্রে অ্যাপলকে ছাড়িয়ে গেছে। ক্যানালিস রিসার্চের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে স্মার্টফোন বাজারে শাওমি ১৭ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে।

বাংলাদেশের বাজারে অফিসিয়ালি শাওমির তিন বছরে পূর্ণ হল এই ১৭ জুলাই। দেশে প্রযুক্তি কোম্পানিটির পথচলা ও পরিচালনার অন্তরালে থেকে কাজ করছেন শাওমি বাংলাদেশের কান্ট্রি জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন চৌধুরী। তিনি তার মূল্যবান অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে যেভাবে প্রযুক্তি জায়ান্টটি নতুন উদ্ভাবনের সঙ্গে সর্বশেষ পণ্য আনছে তারই বিস্তারিত শেয়ার করেছেন।
 
ক্যানালিস এর রিপোর্টে বিশ্বের দ্বিতীয় স্মার্টফোন ব্রান্ড এখন শাওমি, এ ব্যাপারে আপনার অনুভূতি জানতে চাই?
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী: আমাদের ব্রান্ডের জন্য এটি একটি অভূতপূর্ব মাইলফলক। প্রথমবারের মতন আমরা বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছি অ্যাপলকে পিছনে ফেলে।

এ অর্জন আসলেই প্রমান করে আমরা যে স্ট্রাটেজি নিয়ে এগুচ্ছি তা আসলেই কাজ করছে। এ অর্জন শুধু আমাদের একার নয় - বরং এ অর্জন বিশ্বব্যাপী আমাদের সব পার্টনার, রিটেইলার, কর্মী, ও আমাদের মি ফ্যানদের।

বাংলাদেশে শাওমির এই তিন বছরে অপারেশন কতটা বিকশিত হয়েছে?
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী: শাওমি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের বাজারে কাজ শুরু করে ঠিক তিন বছর আগে। প্রথম দিন থেকেই আমরা বাজারে আমাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য কিছু নীতি মেনে চলা শুরু করি। স্থানীয় নেতৃত্বের বিকাশ, বিক্রয়োত্তর সেবার একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং বাজারে সর্বশেষ পণ্য ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তি নিয়ে আসা।

আমরা বিশ্বের অনেক দেশের আগেই রেডমি নোট ১০ প্রো, রেডমি নোট ১০, রেডমি ৯ এর মতো পণ্য বাংলাদেশের বাজারে এনেছি। 

শাওমি তাদের স্মার্টফোন ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি করে বিভিন্ন রিটেইল পার্টনার ও অনলাইন পার্টনারদের মাধ্যমে। আমাদের ডিভাইসগুলো বিক্রির জন্য দেশব্যাপী ২৫০ এর অধিক অথোরাইজড মি স্টোর এবং ১৫০০ এর বেশি অনুমোদিত বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। ঢাকায় শাওমির রয়েছে একটি কল সেন্টার। এছাড়াও ২০ এর অধিক অনুমোদিত বিক্রয়োত্তর সেবা কেন্দ্র রয়েছে দেশব্যাপি। 
 
গত কয়েক বছরে শাওমির অর্জন কী?
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী: শাওমির লক্ষ্য প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে নতুন পণ্য আনা যার ক্রেতা হবে সব শ্রেণীর গ্রাহক। শুরু থেকেই শাওমি বাংলাদেশ তার মি ফ্যানদের সর্বোত্তম সম্ভাব্য সেবা সরবরাহের লক্ষ্যে কাজ করছে। শাওমির সবসময় ফ্যানকেন্দ্রিক। আমাদের মি ফ্যানরা শাওমির পণ্য ব্যবহার করছে এবং সেটির গুণমাণ মুখে মুখে প্রচার করেছে। আর সেটা করেছে তাদের ব্যবহার অভিজ্ঞতা থেকেই। এই অর্গানিক পদ্ধতিতে মানুষের কাছে পৌঁছানোয় আমাদের বিপণন খরচ কমে এসেছে। এর ফলে আমরা গুনগত পণ্যগুলো দ্রুত মি ফ্যানদের কাছে পৌঁছোতে পেরেছি।

আমাদের প্রতিশ্রুতির অন্যতম হচ্ছে, ডিভাইস ব্যবহারে সর্বোত্তম অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করা। দুর্দান্ত সেবা দিয়ে বাংলাদেশে দুই প্রান্তিকে গবেষণা প্রতিষ্ঠান রেড কোয়ান্টার হিসেবে ‘সেরা স্মার্টফোন ব্র্যান্ড’ হয়েছে শাওমি।
 
বাংলাদেশে শাওমির বিপনন কৌশল ও ব্যাবসা সম্প্রসারণে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে?
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী: শাওমি বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ড। আমাদের যাত্রার শুরু থেকে অসাধারণ প্রবৃদ্ধি করছি এবং দেশে আমাদের পণ্যের পোর্টফোলিওর সম্প্রসারণ করতে কাজ করছি। দেশের গ্রাহকদের জন্য আমরা এনেছি ৫জি ডিভাইস, যার মধ্যে রয়েছে মি ১১এক্স, এনেএফসিসহ হ্যান্ডসেট, স্ন্যাপড্রাগন ৮০০ সিরিজের প্রসেসর এবং অত্যন্ত প্রসংশনীয় রেডমি কে২০ প্রো। সম্প্রতি আমরা আমাদের শীর্ষ বিক্রিত স্মার্টফোন রেডমি নোট ৮ (২০২১) সংস্করণ আবার দেশের বাজারে ফিরিয়ে এনেছি। এছাড়াও ঈদের চমক হিসাবে আসছে ২০২১ সালের সবচেয়ে পাতলা ও হালকা স্মার্টফোন মি ১১ লাইট। 

আমরা সবার কাছে স্মার্টফোন পৌঁছে দেয়ার দিকে নজর দিয়েছে। দ্বিতীয় সারির শহর এলাকা যেমন, ভোলার চরফ্যাশন, কক্সবাজারের চকরিয়া, দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় এখন আমরা শাওমির দোকান খুলেছি। উপরোন্তু, আমরা বিক্রয় প্রতিনিধিদেরকে বিনিয়োগ করা শুরু করেছি, যারা মানুষকে নতুন প্রযুক্তি এবং স্মার্ট ডিভাইসের নতুন নতুন ফিচার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেবেন, এতে মানুষজন তাদের ডিভাইসের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারবেন।  
 
শাওমি কী ধরনের কোম্পানি? তাদের ব্যবসার মডেল কী, টিম কত বড়?
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী: শাওমি ফ্যানকেন্দ্রিক কোম্পানি এবং মি ফ্যানরা আমাদের ব্যবসার মূল। বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশের পর থেকে গ্রাহকদের দুর্দান্ত ব্র্যান্ড অভিজ্ঞতা দিতে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের ব্যবসা মডেলটি ত্রিমুখী। এর মধ্যে রয়েছে হার্ডওয়্যার, ইন্টারনেট সেবা এবং খুচরা বিক্রি।

এই লক্ষ্যগুলো নিয়েই আমরা সামনের দিনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশে আমাদের বিক্রির নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী করতে নতুন রিটেইল কৌশলে আরও বিনিয়োগ করেছি। তরুণদের কোম্পানি হিসেবে বাংলাদেশে শাওমি ব্র্যান্ডের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করছে ১৫০০ এর অধিক তরুণ ও উদ্যোমী কর্মী।  

মাত্র তিন বছরে শাওমি অন্যদের থেকে কিভাবে আলাদা হতে পেরেছে?
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী: শাওমি কাজ করে ‘ফ্যান ফার্স্ট’ বা ‘ফ্যানরাই আগে’ মূলমন্ত্রে। আমাদের মি ফ্যানদের একটি বড় বৈশ্বিক কমিউনিটি রয়েছে। তারাই শাওমি ব্র্যান্ড এবং কোম্পানির পণ্য উন্নয়নের অবদান রাখে।    

মি কমিউনিটি বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে ১৭ জুলাই ২০১৮ সালে। সেদিনই বাংলাদেশে শাওমি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে। মি কমিউনিটি বাংলাদেশে এখন নিবন্ধিত প্রায় তিন লাখের মত মেম্বার রয়েছে। এতো অল্প সময়ে বাংলাদেশে আর কোনো স্মার্টফোন ব্র্যান্ড এতো শক্তিশালী কমিউনিটি তৈরি করতে পারেনি। 

বাংলাদেশে মি ফ্যানদের যুক্ত রাখতে আমরা নানা ধরনের অনলাইন প্রতিযোগিতা এবং অফলাইনে ফ্যান মিটআপ আয়োজন করেছি। আমাদের সর্বশেষ স্মার্টফোনগুলোতে থাকা নতুন সব ফিচারের বেটা টেস্টিং করাতে মি ফ্যানদের নিযুক্ত করি। আমরা তাদের কাছ থেকে মূল্যবান সব ফিডব্যাক পেয়ে থাকি।   
 

শাওমি বাংলাদেশের পরিকল্পনা কী?
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী: একটি ফ্যানকেন্দ্রিক ব্র্যান্ড হওয়ার আমরা সবসময় খেয়াল করি ভোক্তাদের পরিবর্তনের প্রবণতা, আচরণ এবং প্রয়োজনীয়তা। আমাদের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশি মানুষের হৃদয়ে সবচেয়ে প্রিয় ব্র্যান্ড হওয়া। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের মি ফ্যানরা আমাদের ব্যবসার প্রান। 

আমাদের আইওটি ডিভাইসের মাধ্যমে আমরা একটি স্মার্ট ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে চাই। আমরা ফাইভ-জি সম্পর্কিত ডিভাইস নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি দেশের মানুষের পছন্দের ব্র্যান্ড হয়ে থাকতে চাই।

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর