রবিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুই জোটে হেভিওয়েটের ছড়াছড়ি

♦ প্রার্থী হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্রপতিসহ শীর্ষপদে দায়িত্ব পালন করা হেভিওয়েটরা
♦ বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলে অন্তত ৩ ডজন শক্তিশালী প্রার্থী
♦ রাজধানীতেই আছেন এক ঝাঁক শক্তিশালী প্রার্থী
♦ আছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা

মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি

দুই জোটে হেভিওয়েটের ছড়াছড়ি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটে হেভিওয়েট প্রার্থীর ছড়াছড়ি। দুই জোটে অন্তত অর্ধশত হেভিওয়েট প্রার্থী লড়াইয়ে প্রস্তুত। এবার ভোটে হবে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আটঘাট বেঁধেই মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ‘তারকা’ প্রার্থীরা। হেভিওয়েট প্রার্থীর বিপরীতে কোথাও কোথাও শক্ত প্রার্থী। আবার কোথাও কোথাও নবীন প্রার্থীর ছুড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে তাদের। প্রার্থী নিয়ে আছে চমকও। এ নিয়ে হেভিওয়েটদের টেনশনের পাশাপাশি আসন হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি আসনের সমান গুরুত্ব হলেও হেভিওয়েট প্রার্থীর দিকেই দৃষ্টি সবার। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট এখনো আসন বণ্টন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। দুই পক্ষই সময় নিচ্ছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষের দিকে নজর রাখছে। শেষবেলায় মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে তারা। চলতি সপ্তাহের শেষ দিকেই দুই জোট তাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে পারে। মহাজোট এবং ঐক্যফ্রন্টের হেভিওয়েট প্রার্থীদের মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত।

বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলে অন্তত তিন ডজন হেভিওয়েট নেতা রয়েছেন, যারা আওয়ামী লীগ জোট নেতাদের বিরুদ্ধে শক্তভাবে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রাজধানী ঢাকা শহরেই লড়বেন একঝাঁক হেভিওয়েট নেতা। বিএনপির অনেক জনপ্রিয় নেতাও ঢাকা মহানগরে মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন। সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিপক্ষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায় না বিএনপি জোট। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ভোটের ফলাফল পর্যন্ত মাঠে থাকবে জোট ও ফ্রন্ট। মনোনয়ন নিয়ে দুই দল ও জোটেই চলছে চমক। নোয়াখালী-৩ বেগমগঞ্জ থেকে পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাসেমের ছেলে আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ রাসেলও বিএনপি থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এম এ হাসেমের আরেক ছেলে রুবেল আজিজ ঢাকা-১৭ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। একইভাবে ফেনী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন ওয়ান-ইলেভেনের আলোচিত  লেফটেন্যান্ট  জেনারেল মাসুদ উদ্দীন  চৌধুরী। তিনি এবার জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। আর তার বিপরীতে বিএনপির মনোনয়নপত্র কিনেছেন ওয়ান ব্যাংক ও এইচআরসি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাঈদ হোসেন  চৌধুরী। হঠাৎই আলোচনায় এসেছেন এক সময়ের আওয়ামী সরকারের অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও তিনি এবার গণফোরাম হয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে লড়তে চান আওয়ামী লীগের নৌকার সঙ্গে।

আওয়ামী লীগ জোট : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফরম কেনার মাধ্যমে ৯ নভেম্বর শুরু হয় মনোনয়ন বিক্রির কার্যক্রম। তার জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয় গোপালগঞ্জ-৩ আর রংপুর-৬ আসনে। ওই দুই আসনে বিএনপি জোটের শক্ত কোনো প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবারও লড়ছেন নোয়াখালী-৫ আসন থেকে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবারও লড়বেন ফরিদপুর-২ আসন থেকে। এ জন্য তিনি দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এবার ফরিদপুর-২ আসনটি জাকের পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে এখন আলোচনার শীর্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনি নড়াইল-২ আসন থেকে নৌকা পেতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এখন সবার আলাদা দৃষ্টি থাকবে তার দিকে। একইভাবে আলোচনায় রয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ। তিনি কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে নৌকা নিয়ে ভোট করতে চান। এবার তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ঝালকাঠি-২ আসনের এমপি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি এ আসন থেকে ভোট করতে চান। সে জন্য দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তিনি। আওয়ামী লীগের আরেক বর্ষীয়ান নেতা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি ভোলা-১ আসনের এমপি। এবারও তিনি এ আসন থেকেই নির্বাচন করবেন। দলের মনোনয়ন ফরম উত্তোলন ও জমা দিয়েছেন তিনি। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী শেরপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি। তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনেও এ আসন থেকে দলের মনোনয়ন চান। সে জন্য দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন এ নেত্রী। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম গোপালগঞ্জ-২ আসনের বার বার নির্বাচিত এমপি। তিনি এবারও এ আসন থেকে নৌকা নিয়ে ভোট করবেন।

গোপালগঞ্জ-১ আসন থেকে নিবাচিত এমপি কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। এবারও তিনি এ আসন থেকে দলের মনোনয়ন চান। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে বার বার নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও নৌকা পেতে তিনি দলের মনোনয়ন ফরম উত্তোলন ও জমাদানের কাজ শেষ করেছেন। হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম তুলেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। 

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ-১ আসনের এমপি। তিনি বর্তমানে দেশের বাইরে চিকিৎসাধীন। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী এলাকার জনগণ তাকেই প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। সে জন্য তার পক্ষে দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন, এবারও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই এ আসনে নৌকা পাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি চট্টগ্রাম-১ আসনের এমপি। এবারও তিনি একই আসনে দলীয় মনোনয়ন চান। দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ গত সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনে নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সনের কাছে পরাজিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাজী জাফরউল্লাহ এ আসনে দলের মনোনয়ন চান। আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি টাঙ্গাইল-১ আসনের এমপি। এবারও এ আসনে দলের মনোনয়ন চান সাবেক এই খাদ্যমন্ত্রী।

জামালপুর-৩ আসনের টানা পাঁচবারের এমপি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। তিনি এবারও এ আসন থেকে নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তার আসনে অন্য কেউ নৌকায় মনোনয়ন পেতে দলীয় ফরম তোলেননি বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিদের মধ্যে হেভিওয়েট প্রার্থীরা হলেন শেখ হেলাল উদ্দিন বাগেরহাট-১ ও ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ঢাকা-১০। তাদের আসনেও কেউ দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। 

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ কুষ্টিয়া-৩, ডা. দীপু মনি চাঁদপুর-৩ ও অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক-১৩ আসনে লড়বেন নৌকা নিয়ে। সিলেট-১ আসন থেকে এবারও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ আসনে লড়তে নৌকা চান সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান ও অর্থমন্ত্রীর ভাই এ কে এম মোমেন। এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে এবারও নির্বাচন করছেন এ কে এম শামীম ওসমান।   

এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ এবার মহাজোট হিসেবে ভোট করবে। সেক্ষেত্রে ১৪ দলের শরিকরা ভোটে লড়বেন নৌকা নিয়ে এবং জাতীয় পার্টির নিজস্ব প্রতীক লাঙল নিয়ে ভোট করবে তারা। মহাজোটের শক্তিশালী শরিক দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে এবার নির্বাচন করছেন। ঢাকার অদূরে এ আসনে এরশাদের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণাকেও আওয়ামী লীগের বড় একটা অংশ স্বাগত জানিয়েছে। এ ছাড়াও এরশাদ ঢাকা-১৭ ও রংপুর-৩ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে লড়তে চান। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ ময়মনসিংহ-৪, কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের লালমনিরহাট-৩ এবং জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার পটুয়াখালী-১ ও ৪ আসনে লড়বেন।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবারও ঢাকা-৮ আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা পেতে চান। আরেক শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল ইনু কুষ্টিয়া-২ এবং জাতীয় পার্টি-জেপি সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পিরোজপুর-২ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এবারও এ আসন থেকে জোটের প্রার্থী হতে চান। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ভোট করছে বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট। যুক্তফ্রন্ট আসন নিয়ে দরকষাকষি শুরু করেছে। মহাজোটের প্রার্থী হয়ে মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে কুলা প্রতীকে নির্বাচন করতে চান বি. চৌধুরীর ছেলে ও বিকল্পধারার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহি বি. চৌধুরী। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬, এম এম শাহীন মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হতে চান। দরকষাকষিতে সমঝোতায় এলে এ তিনজন দলের মনোনয়ন পাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও বিকল্পধারার মহাসচিব নোয়াখালী-৪ থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তবে তাকে সেখানে ছাড় দেওয়া হবে না বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ নোয়াখালী-৪ আসনের বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী। সেক্ষেত্রে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে আবদুল মান্নানকে ছাড় দেওয়া হতে পারে।   

বিএনপি জোট ও ফ্রন্ট : কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য তিন আসনে মনোনয়ন ফরম তোলা হয়েছে। এগুলো হলো— বগুড়া ৬ ও ৭ এবং ফেনী-১ আসন। আইনি জটিলতায় বেগম খালেদা জিয়া শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মামলার সাজার রায় আপিল বিভাগে স্থগিত হলেই তিনি নির্বাচন করতে পারবেন বলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে ফেনী-১ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু নির্বাচন করতে পারেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ভোট করতে রাজি হলে বগুড়া-৬ আসনটি তাকে ছেড়ে দেবে বিএনপি। আরেক আসনে বিএনপির হেভিওয়েট কোনো নেতা নির্বাচন করতে পারেন বলে জানা গেছে। তবে ড. কামালের জন্য ঢাকা-১২ আসন ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি।

সারা দেশে বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের অন্তত তিন ডজন হেভিওয়েট নেতা ভোটে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর মধ্যে বিএনপিরই রয়েছেন দুই ডজনের বেশি নেতা। পঞ্চগড়-১ আসনে বিএনপির হাইকমান্ড চায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারকে লড়তে। মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও মনে করছেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ভোট করলে আসনটি পুনরুদ্ধার হবে। তবে ব্যারিস্টার জমির নিজে নির্বাচন করতে চান না। তার ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির ওই আসনে মনোনয়নপত্র কিনে জমা দিয়েছেন।  

ঠাকুরগাঁও-১ (সদর) আসনে লড়ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন মির্জা ফখরুল। ওই আসনে তার সঙ্গে হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র  সেন। এ ছাড়াও অর্ধডজন আওয়ামী লীগ নেতা-নেত্রী এ আসনে মনোনয়ন সংগ্রহ করেন।  বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনটি বিএনপি ছেড়ে দিচ্ছে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে। দলের নেতা-কর্মীদেরও সেই দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে দুই সাবেক এমপি বিএনপির হাফিজুর রহমান ও জামায়াতের মাওলানা শাহাদাতুজ্জামানও ওই আসনে প্রার্থী হতে মরিয়া। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন। এর আগে ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না ’৯১ থেকে তিনবার এ আসনে নির্বাচন করেছেন। প্রথমবার জনতা মুক্তি পার্টির হয়ে, পরের দুবার ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। জিততে পারেননি একবারও।

ঐক্যফ্রন্টের অন্য নেতাদের মধ্যে ঢাকা-২ ও ৩ আসনের একটি থেকে লড়তে চান গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। যদিও সেখানে বিএনপির দুজন শক্ত প্রার্থী রয়েছেন। একজন হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যিনি ঢাকা-৩ আসন থেকে লড়বেন। আরেকজন আমানউল্লাহ আমান যিনি ঢাকা-২ আসন থেকে লড়বেন। বিএনপি এই দুই আসন ছাড়বে না বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে বিএনপি মোস্তফা মহসিন মন্টুকে ঢাকার অন্য কোনো একটি আসনে ছাড় দিতে পারে বলে জানা গেছে। 

মৌলভীবাজার-২ আসনে ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ভোটে লড়তে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। সেখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী আবেদ রাজাসহ আরও দুজন প্রার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া এম এম শাহীন বিএনপি ছেড়ে যুক্তফ্রন্টে যোগ দেন। সেখানে সুলতান মনসুরই লড়বেন ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে। চট্টগ্রাম-১৪ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে মনোনয়ন চাচ্ছেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। সেখানে জামায়াতের পাশাপাশি এলডিপির কর্নেল অলি আহমদও লড়তে চান। এ আসনে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের পাশাপাশি ঢাকায় একটি আসনে লড়তে পারেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তাকে ঢাকার একটি আসন ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন কুমিল্লা-৪ থেকে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়নপ্রত্যাশী। ওই আসনে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান ও প্রকৌশলী মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী লড়তে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাম লড়তে চান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে। ওই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়াও ২০-দলীয় জোটের শরিক দল সাম্যবাদী দলের কমরেড সাঈদ আহমেদও লড়তে চান ওই আসনে। টাঙ্গাইল-৮ আসনে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী লড়তে পারেন। এ ছাড়াও ঢাকায় একটি আসনে তিনি লড়তে পারেন বলে জানা গেছে।

কুমিল্লা-১ আসনে লড়বেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তবে তিনি কুমিল্লা-২ আসনেও মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার মারা যাওয়ায় ওই আসনে তিনি নির্বাচন করতে চান। তবে এম কে আনোয়ারের ছেলেও ওই আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে। নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে লড়বেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। ওই আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ঢাকা ৮ ও ৯ আসন থেকে লড়তে চান। তবে তিনি সর্বশেষ ঢাকা-৯ আসনে (খিলগাঁও-সবুজবাগ) থেকে নির্বাচন করেন। এবার তিনি দুই আসনেই মনোনয়ন ফরম তোলেন। একটিতে মনোনয়ন সংগ্রহ করেন তার স্ত্রী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। ঢাকা-৯ আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে লড়াই হবে মির্জা আব্বাসের। তবে ঢাকা-৮ (রমনা-শাহবাগ-মতিঝিল) আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব কারাবন্দী হাবিব-উন নবী খান সোহেল। তার পক্ষে মনোনয়ন সংগ্রহ করেন তার স্ত্রী কামরুন্নাহার। ১৪-দলীয় জোটপ্রার্থী রাশেদ খান মেননের সঙ্গে হাবিব-উন নবী খান সোহেলের জমজমাট লড়াই হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা-১৬ (পল্লবী, শাহআলী ও মিরপুর একাংশ) লড়বেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। এরই মধ্যে ওই এলাকায় তিনি গণসংযোগ শুরুও করেছেন। নরসিংদী-২ (পলাশ-সদরের আংশিক অংশ) আসনে একক প্রার্থী হিসেবেই মাঠে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-ডবলমুড়িং আংশিক) আসনেও স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দলের একক প্রার্থী হিসেবে কাজ করছেন। চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান, চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-হালিশহর ও খুলশীর একাংশ) আসনে আরেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ভোলা-৩ (তজুমুদ্দিন-লালমোহন) আসনে ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা-১৫ (কাফরুল-মিরপুরের একাংশ) আসনে জোটের শরিক দলের নেতা মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম, নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনে আরেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, চট্টগ্রাম-৪ (হাটহাজারী) ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন আহমেদ, নাটোর-২ (সদর) আসনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এবং চাঁদপুর-১ (কচুয়া-মতলব দক্ষিণের একাংশ) আসনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।

এ ছাড়াও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বরগুনা-২ আসনে অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ভোলা-১ আসনে ২০-দলীয় জোটের শরিক দল বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ, ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ময়মনসিংহ-৪ আসনে অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী।

সর্বশেষ খবর