আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে এবং ভিন্নমত দমনে জনগণের ওপর নজরদারি করেছে। ক্ষমতা ধরে রাখতে তারা আড়ি পাতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। নজরদারি করা সংস্থাগুলো বন্ধ করলেও কোনো স্থায়ী সমাধান আসবে না। এগুলোকে আইনি কাঠামো ও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) কার্যালয়ে ‘আড়ি পাতা, গোপনীয়তার অধিকার ও বাক্স্বাধীনতা’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে বক্তারা এ সব কথা বলেন। ‘সিভিল রিফর্ম গ্রুপ-বাংলাদেশ ২.০’ এ আয়োজন করে।
এসময় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে আড়িপাতার জন্য চড়া দামে সফটওয়্যার কেনা হলেও তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে অনেক দামি দামি সফটওয়্যার কেনা হয়েছিল। অথচ সেগুলো ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। এগুলোর অপব্যবহার করা হয়েছে ভিন্নমত দমানোর জন্য।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এনটিএমসি ও ডিওটি-র মতো সরকারি যেসব অঙ্গপ্রতিষ্ঠান কয়েক বছর এ আড়িপাতার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের সংস্কার করা বা নতুন লোক বসিয়ে কোনো সমাধান হবে না। দুই প্রতিষ্ঠানকে এখনই বিলুপ্ত করতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য যদি আড়িপাতার খুব প্রয়োজনীতা থেকেই থাকে, তাহলে সেটার জন্য আলাদা কমিশন করা উচিত। নতুন করে বিধিবিধান তৈরি করা জরুরি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন বলেন, তদন্ত ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো বিশ্বেই আড়িপাতা হয়। সেটা নাগরিকের ওপর নয়। সেটাকে আইনগত আড়িপাতা বলে। আইনগত আড়িপাতা হলে কীভাবে হবে, তথ্য কার কাছে যাবে, কার অনুমতি লাগবে, এগুলোর নিয়মিত নিরীক্ষা হতে হবে।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, আড়িপাতার বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। গত কয়েক বছর মিডিয়াতে বিভিন্ন ব্যক্তির কলরেকর্ড ফাঁসের ঘটনায় মিডিয়ার নৈতিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ। এগুলোও এখন আলোচনায় আনতে হবে। মিডিয়াকেও দায় নিতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি আড়িপাতার শ্বেতপত্র প্রকাশের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময়ে যারা আড়িপাতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুরের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, সাইবার বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির, সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজা ও আশরাফ কায়সার, টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশীদ, আইনজীবী মিতি সানজানা, বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ এবং তথ্যপ্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন, রাষ্ট্রচিন্তার দিদার ভূইয়াঁ, উন্নয়ন গবেষক আহমেদ ওমর তৈয়ব প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/শআ