শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দুই মাসে জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইনে (৯৯৯) ফোন এসেছে ১২ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭৫টি। এর অধিকাংশই মারামারি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে। ৩৯ হাজার ১৮৩টি ঘটনায় সেবা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ৯৯৯ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এসব গ্রাহকের কথা শুনেছেন এবং সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে থানার কার্যক্রম স্বাভাবিক না থাকায় বেশি সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ৯৯৯ সূত্র বলছে, গত ৫ আগস্ট থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৯৯৯-এ সরাসরি সমাধানযোগ্য কল ছিল ৩৯ হাজার ১৮৩টি। এর মধ্যে পুলিশ সার্ভিসিং দেওয়া হয়েছে ৩১ হাজার ৪০৫টি; ফায়ার সার্ভিসিং ৩ হাজার ১৫৭টি এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসিং ৪ হাজার ৬২১টি। এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারামারির বিষয়ে ফোন এসেছে; এই কলের সংখ্যা ৮ হাজার ৭৪৩টি। এর পরের অবস্থানে ছিল হতাহতদের হাসপাতালের সেবা; এই কলের সংখ্যা ৫ হাজার ১৬২টি। তৃতীয় অবস্থানে ছিল সন্ত্রাসী কর্মকান্ড; এর কলের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ২০১টি। এরপর ৪র্থ ও ৫ম অবস্থানে ছিল যথাক্রমে দুর্ঘটনা ও চুরি; এ কলের সংখ্যা যথাক্রমে ২ হাজার ১৪০টি ও ২ হাজার ৫৩৯টি। কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি বছরের আগস্টে ৯৯৯-এ ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৪০৩টি কল এসেছে। এর মধ্যে ২ লাখ ৭২ হাজার ১৭২টি কল সরাসরি সমাধানযোগ্য ছিল। পাশাপাশি ৯৯৯-এ ৩ লাখ ১ হাজার ৩২১টি অপ্রয়োজনীয় কল এসেছে। এ ছাড়া সেপ্টেম্বরে ৯৯৯-এ ৭ লাখ ১৬ হাজার ৩৭২টি কল এসেছে। এর মধ্যে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৭৫৮টি কল সরাসরি সমাধানযোগ্য ছিল। পাশাপাশি ৯৯৯-এ ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৪টি অপ্রয়োজনীয় কল এসেছে। প্রতিদিন গড়ে ট্রিপল নাইনে ফোন আসছে ২২ থেকে ২৩ হাজার। ট্রিপল নাইনে একসঙ্গে ৮০টি কল রেসপন্স করতে পারে। দিন যতই যাচ্ছে ততই জনগণের আস্থা অর্জন করেছে জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইন। সহায়তার প্রতীক হয়ে দাঁড়ানো ট্রিপল নাইনে জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশি সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে ক্রমেই আস্থা বাড়ছে জরুরি এই সেবার ওপর। বিদ্যুৎ গতিতে কাজ করছে সেবাটি। ট্রিপল নাইন সংশ্লিষ্টরা বলছে, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর সেবাটি চালুর পর থেকে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ বছর ৯ মাসে ৫ কোটি ৭৮ লাখ ১৪ হাজার ৮০৩টি কল এসেছে। এর মধ্যে ১৯ লাখ ৫ হাজার ৯৯২টি কল সরাসরি সমাধানযোগ্য ছিল। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, মোট কলের ২ কোটি ৫০ লাখ ২১ হাজার ৯৪৭টি কলের বিপরীতে কোনো না কোনোভাবে সার্ভিস দেওয়া হয়েছে। যা মোট কলের ৪৩.২৮ শতাংশ। পাশাপাশি ট্রিপল নাইনে অপ্রয়োজনে অনেকে ফোন করছেন। দিচ্ছেন মিথ্যা তথ্যও। গেল ৬ বছর ৯ মাসে ট্রিপল নাইনে ৩ কোটি ২৭ লাখ ৯২ হাজার ৮৫৬টি অপ্রয়োজনীয় কল এসেছে। যা মোট কলের ৫৬.৭২ শতাংশ। এর মধ্যে বিরক্তকর কলই ছিল ২৫ লাখ ২ হাজার ২৬৯টি।
৯৯৯ এর প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ জানান, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে ট্রিপল নাইনের সেবা। জনগণ যখনই বিপদে পড়ে তখনই ট্রিপল নাইনে ফোন দিচ্ছে। আমাদের দক্ষ কর্মী বাহিনী নিরলস পরিশ্রম করে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা জনগণকে সেবাটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।
প্রসঙ্গত, গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কে ৯৯৯ নম্বরে জাতীয় হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়। ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সেখানে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলে। ৮ অক্টোবর ৯৯৯ নম্বর পূর্ণাঙ্গভাবে পরিচালনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা হয়। এরপর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২৬ অক্টোবর থেকে ৯৯৯-এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করে পুলিশ। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর আবদুল গণি রোডে পুলিশের ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কার্যক্রম শুরু হয়।