চট্টগ্রাম ওয়াসা স্যুয়ারেজ প্রকল্পের প্রথম ধাপের মাধ্যমে নগরের ২০ লাখ মানুষের তরল বর্জ্য পরিশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ কাজটিতে এখন স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কাজ চলছে ঢিমেতালে। কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে টানা কর্মসূচি পালন করছে নাগরিক সমাজ। এ সময় এমডির পদত্যাগ দাবিতে এক দফা আন্দোলনও চলছিল। কার্যত এর পরই স্যুয়ারেজ প্রকল্পে স্থবিরতা শুরু হয়। দেখা দেয় আর্থিক সংকট। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৫৪৮ কোটি টাকা ছাড়ের কথা থাকলেও এ অর্থ পাওয়া যায়নি। অর্থ না পাওয়ায় ঠিকাদাররাও কাজে গড়িমসি করছেন। তাছাড়া প্রকল্পে কর্মরত প্রায় ১ হাজার ৫০০ শ্রমিকের মধ্যেও দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। প্ল্যান্টের ভিতরেই নিয়মিত কাজ করেন প্রায় ৫০০ শ্রমিক।
নাম প্রকাশ না করে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ওয়াসার ফাইলগুলো স্বাভাবিক গতিতেই চলে যেত। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর থেকে ওয়াসার কোনো ফাইলই নড়ছে না। চট্টগ্রাম থেকে কোনো ফাইল গেলে ‘পরে দেখা যাবে’ বলে রেখে দেওয়া হয়। ফলে স্যুয়ারেজের মতো বড় প্রকল্পেও এখন আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। কাজে চলছে স্থবিরতা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, চলতি অর্থবছরের টাকাগুলো এখনো পাওয়া যায়নি। ফলে প্রকল্পে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। তবে প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। আশা করি যথা নিয়মে কাজ শেষও হবে। প্রথম ধাপে নগরের ২১টি ওয়ার্ডের ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে পয়ঃনিষ্কাশন সেবার আওতায় আনা হচ্ছে। প্রথম ধাপের কাজ ৫৮ শতাংশ শেষ। ২০২৬ সালের জুনে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিজে কাজ চলছে।
ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ৩ হাজার ৮০৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম মহানগর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্পের’ অধীনে নগরে পরিকল্পিত স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের অধীনে পুরো নগরকে ছয় ভাগে ভাগ করে স্যুয়ারেজ সিস্টেমের আওতায় আনা হচ্ছে। প্রথম ধাপে প্রায় ২০ লাখ মানুষ এ প্রকল্পের আওতায় আনতে নগরের হালিশহরের ১৬৩ একর জমির ওপর দুটি সর্বাধুনিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন এবং প্রায় ২০০ কিলোমিটার পাইপ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্যুয়ারেজ সিস্টেম গড়ে তোলার কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে আনা দৈনিক প্রায় ১০ কোটি লিটার তরল বর্জ্য পরিশোধন করে পরিবেশসম্মতভাবে সাগরে ফেলা হবে। অপর প্ল্যান্টটি ফিক্যাল প্লাসের (বিশেষ ধরনের গাড়িতে বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা পয়ঃবর্জ্য) মাধ্যমে সংগ্রহ করে দৈনিক ৩০০ টন বর্জ্য পরিশোধন করা হবে। প্রথম ধাপের নগরের হালিশহর ক্যাচমেন্টভুক্ত এলাকাসমূহ হলো- এনায়েত বাজার ওয়ার্ড, উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড, উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ড, রামপুর ওয়ার্ড, উত্তর হালিশহর, দক্ষিণ আগ্রাবাদ, পাঠানটুলী, পশ্চিম মাদারবাড়ী, পূর্ব মাদারবাড়ী, আলকরণ, গোসাইলডাঙ্গা, উত্তর মধ্যম হালিশহর এবং দক্ষিণ কাট্টলী, সরাইপাড়া, পাহাড়তলী, লালখান বাজার, বাগমনিরাম, জামালখান, আন্দরকিল্লা, ফিরিঙ্গি বাজার, দক্ষিণ মধ্য হালিশহরের আংশিক। প্রায় ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে পয়ঃনিষ্কাশন সেবার আওতায় আনা হচ্ছে। এ ছাড়াও মহানগরীর যেসব এলাকাকে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভব হবে না, সেসব জনগোষ্ঠীর শতকরা ৪১ ভাগ নিরাপদ সেপটিক স্ল্যাজ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা সম্ভব হবে। যেখান থেকে গাড়ির মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ করে হালিশহরের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে পরিশোধন করা হবে।
প্রসঙ্গত, নগরের বাসাগুলোতে সেপটিক ট্যাংক থাকলেও তা নানাভাবে নালায় চলে আসে। নগরে ২০ হাজারের বেশি বহুতল ভবন আছে। এসব ভবনের অন্তত অর্ধেক ট্যাংকের নিচে ফুটো। এ ফুটো দিয়ে বর্জ্য ভবনের পাশের ড্রেনে আসে, এরপর নালা-নর্দমা ও খাল হয়ে নগরের সুপেয় পানির উৎস কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে গিয়ে পড়ে।