ছিটমহল বিনিময়ের নবম বর্ষপূর্তি আজ। দীর্ঘ ৬৮ বছর বন্দিজীবন কাটিয়ে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক স্বীকৃতি পায় বিলুপ্ত ১১১ ছিটমহলের ৪১ হাজার বাসিন্দা। ১৭ হাজার ১৫৮ একর আয়তনের এসব ছিটমহলে অধিবাসীদের জন্য ছিল না কোনো নির্দিষ্ট দেশ ও পরিচয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে মৌলিক অধিকার বঞ্চিত ছিল। বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের প্রচেষ্টায় স্বাধীনতার স্বাদ পায় ছিটমহলবাসী। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই শেষ হয় ছিটমহলবাসীর অভিশপ্ত ও বন্দিজীবন। বাংলাদেশের নাগরিক স্বীকৃতি পায় লালমনিরহাটের ৫৯, কুড়িগ্রামের ১২, নীলফামারীর ৪ ও পঞ্চগড়ের ৩৬ ছিটমহলের বাসিন্দারা। তারা পেতে শুরু করে দেশের অন্যান্য অধিবাসীদের ন্যায় সুবিধা। এরপর নয় বছরে ওই এলাকার উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় নানা পদক্ষেপ। সেখানকার উন্নয়নে ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এতে বদলাতে থাকে সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনমান। লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের বিলুপ্ত ছিটমহল বাঁশপচাইয়ের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আজিজুল হক বলেন, ছোট থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ছিল না জমির মালিকানা, পড়াশোনার সুযোগ। বাংলাদেশের ভূখে র ভিতরে থাকলেও কাটাতে হতো বন্দিজীবন। ছিটমহল বিলুপ্ত হওয়ার পর মিলেছে নাগরিকত্ব, জমির মালিকানা, ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ। সরকার নির্মাণ করেছে রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাড়িবাড়ি দিয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। বাঁশপচাই ভিতর কুটির বাসিন্দা রবিদাস (৪০) বলেন, আমি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের সন্তান। ছোটবেলায় শুনতাম আমরা ভারতীয়। কিন্তু আমরা ভারতের কোনো সুবিধা, আইনি সহায়তা পেতাম না। এখন আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। দেশের অন্যান্য অধিবাসীরা যেমন জীবনযাপন করে আমরাও তেমন। বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময়ের সমন্নয় কমিটির সদস্য হারুনর রশীদ বলেন, বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীরা বাংলাদেশের অন্যান্য নাগরিকের মতোই জীবন কাটাচ্ছে। তবে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো সরকারিকরণ করা হয়নি। এলাকায় এখনো রয়েছে বেকার সমস্যা। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, লালমনিরহাটের ৫৯টি বিলুপ্ত ছিটমহলের উন্নয়নে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রাস্তা পাকাকরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে। এসব এলাকা মানুষদের জন্য নানা ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎসুবিধা ও সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন করা হয়েছে। এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা হবে।