উজান থেকে আসা পানি ও ভারী বর্ষণে বাগেরহাট শহরের প্রধান প্রধান সড়ক তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অনেকে। জেলার নদনদীর পানি গতকাল বিপৎসীমার ২-৪ ফুট ওপরে প্রবাহিত হয়েছে। এ দিন ভোর রাত থেকে টানা বর্ষণে বাগেরহাট পৌরসভাসহ রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে মোংলা আবহাওয়া অফিস। ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে তিন দিন ধরে চার ফুট পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। বাগেরহাট সদর, রামপাল, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা, কচুয়ার অনেকের পুকুর ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ।
বাগেরহাট শহরের খানজাহান আলী রোড, রেল রোড, সাধনার মোড়, শালতলা, পিটিআই মোড়, খারদার স্কুল রোড, জেলা হাসপাতাল মোড়, সরকারি স্কুল, জেলা ডাকঘরের সামনে, বাসাবাটি, মিঠাপুকুর মোড়, জাহানাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সড়ক, মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের পেছনসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। পৌরসভা কম্পাউন্ডের ভিতরেও ঢুকেছে পানি। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে। পানিবন্দি পরিবারগুলো দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। পেটের টানে সড়কে বের হওয়া রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক চালকরা ভারী বৃষ্টির কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন। আরিফ হোসেন নামে একজন রিকশাচালক জানান, চারজনের সংসার চলে আমার পায়ের ওপর। ভোর রাত থেকে ভারী বৃষ্টির মধ্যেই রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। সড়কে লোকজন নেই। বিকাল ৩টা পর্যন্ত ১৪০ টাকা আয় হয়েছে। কী আর করা, একে তো বৃষ্টি তার ওপর সড়কগুলো পানিতে ডুবে থাকায় লোকজন বাসা থেকেই বের হচ্ছে না। অটোচালাক বেলায়েত খান জানান, শহরের সড়কগুলো ভাঙা। এর মধ্যে ভারী বৃষ্টি। একটু বৃষ্টি হলেই শহরের অধিকাংশ সড়কে পানি জমে থাকে। যাত্রী নাই তাই ইনকামও নাই। আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। পুরাতন বাজারের বাসিন্দা হাসিনা বেগম জানান, শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরের মেঝেতে পানি উঠে যায়। আমার বাসায়ও প্লাবিত হয়েছে। এখানকার সব পরিবারের একই অবস্থা। পানি নিষ্কাশন না হওয়া পর্যন্ত দুর্ভোগ থেকে আমাদের মুক্তি মেলবে না। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার মো. আজাদ কবির জানান, তিন দিন ধরে জোয়ারের পানিতে দিনে দুবার চার ফুট পানিতে প্লাবিত হচ্ছে সুন্দরবন। বন্যপ্রাণীদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলেও জানান এই কর্মকর্তা।