হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাওরে হারের গজা বিল থেকে বালু তোলার মহোৎসব চলছে। বছরের পর বছর ধরে বিলে ড্রেজার বসিয়ে অবাধে তোলা হচ্ছে বালু। বিলের তলদেশ থেকে বালু তোলার কারণে এখন পার্শ্ববর্তী জমিগুলো ভেঙে পড়ছে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট। অভিযোগ রয়েছে, বালু উত্তোলনকারীদের রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অনেকে আবার ফায়দা হাসিল করছেন রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে। নিরীহ গ্রামবাসী প্রতিবাদ করলেই নেমে আসে নির্যাতন। করা হয় হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলেও প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিন দেখা যায়- হাওরের মধ্যখানে বিলে বসানো হয়েছে বিশাল আকৃতির ড্রেজার মেশিন। সেখানে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। পাইপ দিয়ে বিলের একেবারে তলদেশ থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। ড্রেজার মেশিনের সঙ্গে লাগানো হয়েছে লম্বা লম্বা পাইপ। বালু পাইপের মাধ্যমে গিয়ে পড়ছে অন্তত দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে। সেখানে এক্সেভেটর ও ট্রাক্টর দিয়ে স্তূপ করা বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। যা চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। গ্রামবাসীর অভিযোগ- বাঁধন মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে মৎস্য চাষ ও আহরণের জন্য লিজ আনা হয় হারের গজা বিল। কিন্তু মৎস্য আহরণ শুধু নামেমাত্র। ওই বিল থেকে বছরের পর বছর ধরে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্রটি।
এ সিন্ডিকেটে কয়েকজন প্রভাবশালী জড়িত রয়েছেন। রাজনৈতিক পদ-পদবী ব্যবহার করে গ্রামবাসির মতামত উপেক্ষা করে তারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন। অবাধে বালু তোলার কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এলাকার ফসলি জমির সঙ্গে রাস্তাঘাটও। এ বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে কাগাপাশা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম, আবদুল আজিম টিপু ও আবদুল মোত্তালিবের বিরুদ্ধে। তবে তারা বলছেন, হাওরের জমিতে হেমন্ত মৌসুমে সেচ দেওয়ার জন্যেই তারা বিলটি খনন করছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য জ্যতি বিকাশ দাস ছোট বলেন- এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বালু না তুলতে তাদের বার বার বলা হলেও তারা কর্ণপাত করছেন না। বছরের পর বছর ধরে তারা কোটি কোটি টাকার বালু বিল থেকে উত্তোলন করছে। আর বালু পরিবহনের ফলে আমাদের এলাকার রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়াও বিলের তলদেশ থেকে বালু তোলার কারণে এখন বিলে পার্শ্ববর্তী জমিগুলো ভেঙে পড়ছে। সাবাজুল হাসান চৌধুরী, আবদুল মতিন চৌধুরীসহ একাধিক গ্রামবাসী বলেন, দলীয় প্রভাব বিস্তার করে বালু সিন্ডিকেটটি দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে মামলা হামলার শিকার হতে হয়। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই দ্রুত যেন বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়। হবিগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক প্রভাংশু সোম মহান বলেন- বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি। যদি এমনটা হয়ে থাকে তা হলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।