কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। জেলা আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর, জেল রোডের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভাঙচুর, আশুগঞ্জ থানায় হামলা, বিভিন্ন স্থানে আগুন লাগিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে শতাধিক আহত হয়েছে।
আহত সংবাদিককে উদ্ধার করতে গিয়ে কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। সকাল থেকেই জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এদিকে আওয়ামী লীগও বিক্ষোভ করে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে। সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিশ্বরোড মোড়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এছাড়া সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শহরতলীর বিরাসার মোড়ে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে ছাত্রলীগ হামলা চালায়। শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এসময় শিক্ষার্থীদের পক্ষে যোগ দেয় এলাকাবাসী। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়। স্থানীয় দৈনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া পত্রিকার সাংবাদিক জয় হোসেন ভিডিও ধারন করার সময় ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় আঘাতা করে। তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়। বিক্ষোভকারীরা কমপক্ষে ২৪টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে।
এসময় পুলিশ প্রায় শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল আর রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেস্টা চালায়। বিরাসার সংঘর্ষে ৩জন গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া শহরের সরকারী মডেল স্কুলের সামনে থেকে কোটা সংস্কারের পক্ষে ছাত্রীরা মিছিল বের করার সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদেরকে লাঠি দিয়ে বেধরক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এতে কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। শহরের খৈয়াসার মোড়, মোদক বাড়ী মোড়, জেল রোড, টেংকের পাড়, টিএ রোড, কালীবাড়ী মোড়, থানার গেইট, ফকিরাপুল এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষুব্ধরা এসময় হালদারপাড়াস্থ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায়।
এদিকে আশুগঞ্জের গোলচত্বরে কোটা আন্দোলকারীদের সাথে উপজেলা আওয়ামী লীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এসময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্থানীয় ভোজন বিলাস রেস্টুরেন্টে আশ্রয় নেয়। বিক্ষুব্ধরা কমপক্ষে ২০টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। পরে বিক্ষোভকারীরা উপজেলা থানা গেইটে হামলা চালালে পুলিশ বিপুল পরিমান রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। এসময় থানার সামনে রাখা একটি গাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষুদ্ধরা।
বিক্ষোভকারীরা আশুগঞ্জ টোলপ্লাজার টোল বক্স ভাঙচুর করে। পরে তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমানের হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এছাড়া আখাউড়া উপজেলার বাইপাস এলাকায় আখাউড়া-সিলেট রেলপথের রেলওয়ে কলোনী এলাকায় অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। তাদের সাথে যোগ দেয় অভিভাবকরাও। ছাত্রলীগ বাধা প্রদান করলে শুরু হয় উভয়পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পিছু হটে এলাকা ত্যাগ করে। এছাড়া জেলার কসবা, নবীনগর, বিজয়নগর, বাঞ্ছারামপুরেও বিক্ষোভ করে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল