নরসিংদীতে আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। আন্দোলনকারীদের হামলায় নরসিংদী-১ সদর আসনের এমপি নজরুল ইসলাম হিরুর (বীর প্রতিক) নাতী ও সদর উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূইয়া, ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন শাহীন, উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাইসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া চার আন্দোলনকারীসহ ২০ জন আহত হয়েছেন।
রবিবার দুপুরে সদর উপজেলার মাধবদী বড় মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন নরসিংদী-১ সদর আসনের এমপি নজরুল ইসলাম হিরু (বীর প্রতিক) এর নাতী ও সদর উপজেলা সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূইয়া (৪৩), চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৪০), তার বডিগার্ড কামাল হোসেন (৩৮), নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই মৎসজীবি লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন (৩৮), মহিসাসুরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জলিল,চরদিগলদীর ইউনিয়নের সজিব ও অজ্ঞাত নামা আরো ১ জন।
গুলিবিদ্ধ আন্দোলনকারী সুমন মিয়া (৩৫), সোহেব (৪১) ও আল আমিনকে (২৫) নরসিংদী সদর হাসপাতালে এবং মীর জাহাঙ্গীরকে (৩০) মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে প্রেরণ করা হয়েছে। জানা যায়,বৈষম্যবিরোধী কোঠা আন্দোলনের ডাকে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় থেকে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী লাঠিশোঠা নিয়ে মিছিল বের করেন। একই সময় মাধবদী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হাইস্কুল মাঠ থেকে একটি মিছিল বের বরে। ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। ওই সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটে।
এসময় এলোপাতারি গুলিতে কমপক্ষে ৬ আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ নেতাদের ধাওয়া দেয়। এসময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দৌড়ে মাধবদী বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম দিকের বড় মসজিদে আশ্রয় নেয়। ওই সময় আন্দোলনকারীরা মসজিদের সিড়িতে ফেলে এলোপতারি পিটিয়ে ছয় আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করে মৃত্যু নিশ্চিত করে হামলাকারীরা। ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের বাঁচাতে আকুতি জানালোও কেউ প্রাণ ভয়ে এগিয়ে আসেনি। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত নিহতদের মরদেহ ঘটনাস্থলে পড়ে রয়েছে।
অন্যদিকে দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর জেলখানা মোড়ে আন্দোলনকারীরা জমায়েত হয়। পরে তারা মহাসড়ক দখল করে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ওই সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নরসিংদী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, মাধবদী হাইস্কুল প্রাঙ্গন থেকে আমরা একটি মিছিল বের করি। ওই সময় মাধবদী পৌর বিএনপি সভাপতি আমানউল্লাহ’র নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা অতর্কিৎ হামলা চালায়। ওই সময় তারা আমাদের উপর ককটেল বিস্ফোরন ঘটালে আমারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ি। পরে আমাদের লোকজন মাধবদী বাজার বড় মসজিদের ভেতরে আশ্রয় নেয়। তখন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা মসজিদের ভেতরে ঢুকে আমার আপন ছোটভাই দেলোয়ার, সদর আসনের এমপির নাতী মনির, ইউপি চেয়ারম্যান শাহীনসহ ছয়জনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের তো মারামারির প্রস্তুতি ছিল না। তাই তারা আমাদের উপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। নামাজ চলাকালে মসজিদের ভেতরে ঢুকে এত বড় নৃসংশ ঘটনা ঘটাতে তাদের একবারও বুক কাপেনি। তাদের বিচার চাই।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ছয় আওয়ামী লীগ নেতা নিহতের খবর পেয়েছি। তাদের স্বজনরা লাশ বাড়িতে নিয়ে গেছেন। আমরা তাদের অনুরোধ করেছিলাম লাশগুলো ময়নাতন্তের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা বাড়িতে নিয়ে যায়। বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
বিডি-প্রতিদিন/শআ