লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম দিঘলী গ্রামের মমিন উল্যার ঘরে হাঁটু পানি ছিল। প্রায় দুই সপ্তাহের মতো ঘরের ভিটি তলিয়ে ছিল পানিতে। এখন পানি ঘর থেকে নেমেছে। তবে দেখা দিয়েছে ক্ষতচিহ্ন।
মমিন উল্যার ঘরের ভিটি দেখলে মনে হবে চাষকৃত কোন ফসলি জমি। অবস্থা এমন হয়েছে যে- ঘরে পা দেওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়ছে। আর ঘরের বেড়া এবং খুঁটি এখন নড়বড়ে হয়ে আছে। ভেঙে পড়ে কিনা- সে ভয় তো আছেই। ঘরের আসবাবপত্র পানিতে পঁচেও নষ্ট হয়ে গেছে। মমিন উল্যার পেশায় একজন কৃষক। বন্যায় কৃষিও শেষ। আয় রোজগার নেই। তাই ঘর মেরামত করারও অর্থ নেই তার।
মমিন উল্যা বলেন, বন্যার পানি উঠা শুরু হলে শুরুতে ঘরে থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু পানি বাড়তে বাড়তে খাটের উপরও উঠে গেছে। তখন কিন্তু অবস্থা বেগতিক হওয়ায় ঘরে থাকতে পারিনি। অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে উঠেছি পাশের বেড়িবাঁধের উপর। সেখানে ঝুপড়ি ঘরে ছিলাম এখন ঘর থেকে পানি নেমেছে। ঘরের টানে স্ত্রী জরাজীর্ণ ঘরে চলে আসে। কিন্তু ঘরের যে অবস্থা থাকার মতো পরিবেশ নেই। শুধু খাটের উপর বসে থাকা ছাড়া কোন উপায় দেখছি না।
মমিন উল্যাদের বাড়ির আশেপাশে বহু কাঁচাঘর পানির নীচে তলিয়ে থেকে নষ্ট হয়েছে। এখনো অনেকের ঘরে হাঁটু পানি, কারো ঘরে কিছুটা কম। যেসব ঘরের পানি নেমেছে, সেগুলো বসবাসের উপযোগী নয়। ঘরের ভিটির মাটি নরম হয়ে আছে। ঘরের নীচের অংশের কাঠ পঁচে গেছে। ঘরের ভেতরে থাকা আসবাবপত্রও নষ্ট হয়েছে অনেকের।
মমিন উল্যার প্রতিবেশি জাহাঙ্গীর বলেন, এখনো ঘরের ভেতের অনেক পানি। এ পানি সরতে আরও অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ঘর পানিতে তলিয়ে থাকায় অনেক মালামাল নষ্ট হয়েছে। ঘরের মাটি নরম হয়ে আছে। এ মাটিতে পা রাখা যায় না। ঘরের পানি সরলেও উঠা যাবে না। মাটিগুলো সরিয়ে নতুন মাটি দিয়ে ভিটি ঠিক করতে হবে। বেড়ার কাঠ পঁচে গেছে, সেগুলোও পরিবর্তন করতে হবে। বন্যায় অনেক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কৃষি কাজ করতাম, বীজতলা পঁচে গেছে। জমিতে রোপা আমন নষ্ট হয়েছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। সবদিক দিয়ে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এ অবস্থায় কি দিয়ে ঘর মেরামত করবেন জানিয়ে হাঁফিয়ে উঠেন ।
ওই এলাকার রোকসানা বেগম বলেন, বন্যার পানি খাটের উপর উঠেছে। বন্যার পানি থেকে তেমন কিছু রক্ষা করতে পারিনি। পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরও এখনো পানির নীচে। এ ঘরে সহজে উঠা যাবে না।
জোহরা বেগম নামে এক নারী বলেন, বেড়িবাঁধের পাশে সরকারি জমিতে ঘর করে থাকতাম। ঘরে এখনো পানি। ঘরের অবস্থা একেবারে খারাপ। কিভাবে এ ঘর মেরামত করবো, সে অবস্থা নেই। এমন অবস্থা জেলার বন্যা কবলিত এলাকার সবখানে।
স্থানীয়রা জানান, চারিদিকে এখনো অনেক পানি। কোথাও বুক পরিমাণ, কোথাও কোমর বা হাটু। বসতভিটিও তলিয়ে আছে। যতক্ষণ পানির নীচে থাকবে, তত ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। ঘরের ভিটির মাটি সরিয়ে নতুন মাটি দেওয়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশ নেই। তাছাড়া ঘর মেরামতের অর্থও নেই অনেকের কাছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের হিসেব মতে জেলাতে এবারের বন্যায় ১৮ হাজার ৩৬৫ টি কাঁচাঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা মেরামত করতে ব্যয় হবে ১২৬কোটি এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়েছি।
বিডি প্রতিদিন/এএম