দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও কারফিউ, আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ এবং প্রধান প্রধান শিল্পাঞ্চলে সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গত তিন মাস ধরে পোশাকশিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পোশাক রপ্তানিকারকরা উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অনেক পোশাক কারখানা এখন ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা হয়েছে। দেশের অর্থনীতির লাইফলাইনখ্যাত পোশাক কারখানায় রপ্তানি বাড়ানোর জন্য ব্যাংকের পলিসি সংস্কার, গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যার সমাধানসহ এনবিআরকে ঢেলে সাজানোর দাবি ব্যবসায়ীদের।
রপ্তানিকারকরা জানান, তারা শীতকালকে সামনে রেখে পশ্চিমা অর্ডার এবং আসন্ন শরৎ ও শীতের রপ্তানি আদেশ নিশ্চিত করতে চান। এর পাশাপাশি দেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ধরে রাখতে সাব-কন্ট্রাক্টরদের দিকে ঝুঁকছেন। তারা বিদেশি বিক্রেতাদের কাছে রপ্তানির মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ করছেন। বর্তমানে অনেক রপ্তানিকারক আশঙ্কা করছেন, উৎপাদন বিলম্বের কারণে তাদের বড় ধরনের ছাড় দিতে হবে বা উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে হবে। বিদেশি খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো যদি শ্রমিক অসন্তোষ ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের কথা বিবেচনা করে মেয়াদ বাড়ানোর অনুমতি দেয়, তাহলে বিরূপ প্রভাব এড়ানো যাবে। এ ছাড়া রপ্তানি বাড়ানোর জন্য ব্যাংকের পলিসি, গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যার সমাধানসহ এনবিআরকে ঢেলে সাজানোর দাবি তাদের।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) জানায়, ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ উচ্চহারে নিচ্ছে, যা ব্যবসাকে প্রভাবিত করছে। সমস্যা সমাধানে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও প্রশাসনের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা দরকার। ব্যাংকের সহায়তা পেলে এ খাতে রপ্তানি আরও বাড়বে। এ ছাড়া তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি বাড়াতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিজের ব্র্যান্ড ইমেজ কাজে লাগাতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার কারণে বিদেশি বায়ারদের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা ও ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানি বাড়ানোর জন্য আমাদের কাজের পরিধি বাড়াতে হবে। এখন আমাদের কাজের পরিধি বাড়াতে হলে পলিসিগত সহায়তা প্রয়োজন। এই পলিসিগত সহায়তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। গত সরকারের সময় বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পলিসি সার্কুলার দিয়েছে। এ পলিসিতে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। এনবিআরের বিভিন্ন নীতিতে আমাদের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এনবিআরের নতুন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আমরা আশাবাদী। এখন কিছুটা সংশোধন হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় এখনো বাকি আছে। আমরা নিয়মিত বসতে পারলে এসবও ঠিক হয়ে যাবে। এনবিআরের সঙ্গে নিয়মিত বসাটা জরুরি। এনবিআরের ভ্যাট, ট্যাক্স ও কাস্টমসের সমন্বয়ে একটা টাস্কফোর্স গঠন করা জরুরি। টাস্কফোর্স নিয়মিত বসবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার ঢেলে সাজাতে হবে। আগের গভর্নরের সময় ঋণের কিস্তি ছয় মাস না দিতে পারলে ব্যবসায়ীরা ঋণখেলাপিতে পরিণত হতেন। এখন সেপ্টেম্বর থেকে এটা হয়েছে তিন মাস। আগামী মার্চে এক ডেট ফেল করলেই তিনি ঋণখেলাপি হবেন। আমার জানামতে, বাংলাদেশে ৯০ শতাংশ ঋণগ্রহীতা এক কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হবেই। এর ফলে অনেক ব্যবসায়ী ঋণখেলাপিতে পড়বেন। এটা বন্ধ করতে হবে। বর্তমানে আমাদের অর্থনীতির যে অবস্থা, আমরা এলডিসি গ্রাজুয়েশনের মতো অবস্থায় নেই। গ্রাজুয়েশন হলাম কিন্তু ভাত খেতে পারলাম না। তাহলে এই গ্রাজুয়েশনের আমাদের দরকার নেই। এই এলডিসি গ্রাজুয়েশন স্থগিত করতে হবে। আমাদের গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান করতে হবে। ব্যাংকিং খাত সংস্কার করতে হবে। এসব করা গেলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত এগিয়ে যাবে। এ ছাড়া আমাদের আশার আলো প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সারা বিশ্বে তার যে গ্রহণযোগ্যতা তা আমি নিজে দেখে এসেছি। তার সহযোগিতায় এ খাত এগিয়ে যাবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল