একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী নাট্যজন, নির্দেশক অভিনেতা জামাল উদ্দিন হোসেনের নামাজের জানাজা বাদ জোহর আকরাম জুম্মা মসজিদে সম্পন্ন হয়েছে। জানাজা শেষে তাঁকে কক্রেন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নামাজের জানাজায় বিভিন্ন কমিউনিটির প্রচুর সংখ্যক লোকের সমাগম ঘটে।
এর আগে জামাল উদ্দিন হোসেন কানাডার স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় রকিভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মূত্যবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই সন্তান ও তার স্ত্রী বিশিষ্ট অভিনয় শিল্পী রওশন আরা হোসেনকে রেখে গেছেন।
জানা গেছে, জামাল উদ্দিন হোসেন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা থেকে কানাডার ক্যালগিরিতে তাঁর ছেলে তাসফিন হোসেন তপুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। এর মধ্যে গত ১৮ সেপ্টেম্বর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারছিলেন না। এর পরই চিকিৎসকরা তাকে ভেন্টিলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি এতদিন লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। গতকাল শুক্রবার লাইফ সাপোর্ট খুলে দিলে তাঁর হার্টবিট আনস্টাবল হয়ে পড়ে। পরে ক্যালগেরি'র রকিভিউ হাসপাতালে একই দিনে সন্ধ্যা ছয়টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মূত্যকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
উল্লেখ্য টেলিভিশন ও মঞ্চ নাটকের একসময়ের ব্যস্ত অভিনয়শিল্পী জামাল উদ্দিন হোসেন সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকে মঞ্চ নাটকে অভিনয় শুরু করেন। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের এই সদস্য পরে টেলিভিশন নাটক এবং চলচ্চিত্রেও কাজ করেন। গেল ১৫ বছর ধরে অভিনয়ে একেবারে অনিয়মিত তিনি। এই সময়টায় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া-আসার মধ্যে ছিলেন। মাঝেমধ্যে যখন দেশে ফিরতেন, টুকটাক অভিনয় করতেন। সাত–আট বছর ধরে একেবারে অভিনয়ে নেই। থাকেন না বাংলাদেশেও, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে ছিলেন। জামালউদ্দিন হোসেনের ছেলে তাশফিন হোসেন কানাডার মাউন্ট রয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনান্স বিভাগের অধ্যাপক। মেয়ে তাঁর পরিবার নিয়ে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে।
জামালউদ্দিন হোসেন ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি তাঁর নিজের নাট্যগোষ্ঠী নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল শুরু করেন এবং এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বেতার টেলিভিশন শিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জামালউদ্দিন হোসেন ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘রাজা রাণী’, ‘চাঁদ বণিকের পালা’, ‘আমি নই’, ‘বিবি সাহেব’, ‘যুগলবন্দী’সহ কয়েকটি আলোচিত মঞ্চ নাটক পরিচালনা করেছেন। জামালউদ্দিন হোসেনের অভিনয়শিল্পী স্ত্রী রওশন আরা হোসেনেরও শারীরিক অবস্থাও ভালো না।
জামালউদ্দনি হোসেনের জন্ম: ৮ অক্টোবর ১৯৪৩। তিনি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক ও নাট্য কর্মী। শিল্পকলায় তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে তাকে একুশে পদক প্রদান করেন।
বিডি প্রতিদিন/আশিক