আমার স্কুল জীবনের অধিকাংশ পড়ালেখাই ছিলো স্কলারশিপে। কিছু টাকা জমিয়ে কিনেছিলাম Simens C 65। সেই সময় পুরো এলাকায় ওটাই প্রথম ক্যামেরা মোবাইল। সবাই আমার সেই মোবাইল দেখতে আসতো। একদম ঝাপসা ছবি, তেমন কিছু দেখা যায় না- আদল বোঝা যেতো শুধু। তারপরও সেটাই ছিলো সেই যুগের মিরাকল!
এরপর এসএসসিতে বোর্ডপর্যায়ে মেধাতালিকায় রেজাল্টের পর খুব খুশি হয়ে আব্বু গিফট করলো Nokia N-70। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না ওই যে পেছনে ফ্লিপ করে মোবাইলের ক্যামেরা অন করা, তা হয়ে গেলো আরেক মিরাকল!
তৎকালীন মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী সাহেবের কাছে যখন সার্টিফিকেট এবং ক্রেস্ট আনতে গিয়েছিলাম, আমার সেই মোবাইল দেখে কতো ছেলের চিরকুট পেলাম ওই একদিনে। আমি সুন্দর কিংবা রেজাল্ট খুব ভালো এটা ফ্যাক্ট না, ফ্যাক্ট ছিলো আমার হাতের সেই Nokia N 70!
এই মোবাইল হাতে ছিলো মানে আমি অবশ্যই কোনো শিল্পপতির মেয়ে, তারা হয়তো এটাই ভেবেছিলো। বড়লোকের এমন মেয়ে হাতছাড়া করতে চায় কে? আদতে ওই মোবাইলটি ছিল আমার আব্বুর তৎকালীন চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে আমার এতো ভালো রেজাল্ট করার গিফট। পুরো কলেজে সিনিয়র জুনিয়র মিলিয়ে ওই একপিস N70!
এরপরের আরেক মিরাকল হলো আমি চাকরিতে ঢোকার পর। কিনে ফেললাম আইফোন ৫। হয়তো অনেকেরই মনে আছে ওই মডেলটার কথা। আগা মাথা কিছুই বুঝতাম না প্রথমে। বিরক্ত হয়ে পাশাপাশি কিনলাম একটা ওয়ালটন। আইফোনটা ছিলো শুধুই শো-অফ। মিটিং এ গিয়ে সামনে রেখে দেয়ার জন্য!
টিউশনির টাকা ছিলো আগে থেকেই জমানো, তারপর বেতনের টাকাতো আছেই। নতুন মতুন মডেলের মোবাইলের প্রতি ঝোঁক ছিল অনেক। তবে আমার মন উঠে গেল এক পর্যায়ে। আমার আব্বু মারা যাবার আগে আমাকে সর্বশেষ গিফট করেছিলেন আইফোন ৬!
এরপর কতো মডেল এলো গেলো, ড্রয়ার খুলে আব্বুর দেয়া ওই মডেলটাই দেখি বারবার। আমাকে আর কোনো মডেল টানলো না। নতুন কিনি ভাইবোনদের জন্য, আমার আর তেমন বদলানো হয় না। আজ হঠাৎ ভাবতে বসলাম, মানুষ কিভাবে বদলে যায়!
এখন যারা আইফোনের নতুন মডেল কিনে একটু শো-অফ করে আমার তাদের দেখে হাসি পায় না। ওসব ছোটবেলায় কখনো কখনো আমিও করেছি নিজের অজান্তে হয়তো। সব নতুন ফোন সবার আগে হাতে নেয়ার একটা নেশা ছিলো আগে আমার। অথচ গত পাঁচ বছর আমার কোনো নতুন চাহিদা জন্মায়নি। এখন মনে হয় যেটুকু দরকার সেটুকু হলেই তো হয়।
তবে এখন কার যতো মোবাইলই কিনি না কেন, ওই সময়কার কথা ভুলতে পারবো না কখনো। শুধু আমার সেসব নতুন মোবাইলের জন্য কতোজন যে ভাব জমাতে আসতো! কতো মানুষ যেচে কথা বলতে আসতো! মোবাইলে একটা ছবি তুলতে কি বায়না তাদের! আহা! আপনাদেরও নিশ্চয় প্রথম মোবাইল নিয়ে আছে এরকম কোনো স্মৃতি? হয়তো নিজেরাও শো-অফ করেছেন কখনো।
বিডি-প্রতিদিন/শআ