কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখলেন ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকরা। গতকাল সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিকাল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত মেট্রোরেল, সেতুভবন, বিটিভিসহ বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা ঘুরে দেখেন ২৩ জন রাষ্ট্রদূতসহ ৪৯টি মিশনের প্রতিনিধিরা। ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হন রাষ্ট্রদূতরা। ভারত, পাকিস্তান, ফ্রান্স, চীন, জাপান, ভুটান, নেপাল, রাশিয়া, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, মিয়ানমার, ওমান, আফগানিস্তান, মালদ্বীপ, ইরাক, ইরান, নরওয়ে, হাঙ্গেরি, লিবিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, সৌদি আরব, ইতালি, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিসর, তার্কি, স্পেন, শ্রীলঙ্কা, আর্জেন্টিনা, আইইউটি, ইউএই, থাইল্যান্ড, আলজেরিয়াসহ ৪৯ মিশনের রাষ্ট্রদূত/প্রতিনিধিরা এসব দেখেন। গতকাল প্রথমেই যান মিরপুর মেট্রোরেল দেখতে। আন্দোলনের নামে মেঘা এ প্রকল্পের স্টেশনে কী ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে সেই ধ্বংস চিহ্ন দেখেন। এরপর মহাখালী অবস্থিত সেতুভবন ঘুরে দেখেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেখেন এরপর রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশনের ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন ঘুরে দেখেন। এরপর সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ঢাকার ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলো ঘুরে দেখিয়েছি। বিদেশি কূটনীতিকরা নিজ চোখে এসব ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেছেন। আমি নিজেও স্তম্ভিত। বিটিভির বিভিন্ন স্থানে এমন ধ্বংসযজ্ঞ আমার কল্পনার বাইরে ছিল। বিদেশি কূটনীতিকরা জানিয়েছেন তারা আমাদের পাশে আছেন। মন্ত্রী বলেন, মিরপুরের ধ্বংসযজ্ঞ দেখিয়েছি। এমনকি ফুটওভার ব্রিজ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেতু ভবনের ১২ তলা পর্যন্ত আগুন এবং সাত তলা পর্যন্ত উঠে ধ্বংস চালানো হয়েছে। বিটিভি হচ্ছে বাংলা ভাষার প্রথম চ্যানেল। সেখানে যেভাবে আগুন দিয়ে ভবন পুড়িয়েছে। সারি সারি গাড়ি পুড়িয়েছে। সেতু ভবনও একই দৃশ্য। মেট্রোরেলের পাশেও গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। এগুলো রাষ্ট্রের ওপর হামলা। এসব জনগণের সম্পত্তি, কোনো সরকারের সম্পত্তি নয়। এসব পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তান্ডবকেও হার মানিয়েছে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আমাদের টেলিভিশন চ্যানেল জ্বালায়নি। কিন্তু তারা জ্বালিয়েছে। পাক হানাদার বাহিনী যেভাবে মানুষে ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে তারাও একই কায়দায় রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি জ্বালিয়েছে, মানুষের সম্পত্তি পুড়িয়েছে।
ড. হাছান বলেন, লস অ্যাঞ্জেলসে আমাদের মিশনের সামনে একটি বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে পাকিস্তানিরা যোগ দিয়েছিল। বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেটি আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। একইভাবে আমাদের বিভিন্ন মিশনের সামনে যে বিক্ষোভ হয়েছে সেখানে বিএনপি-জামায়াত চক্র পাকিস্তান কমিউনিটির সহায়তা নিয়েছে। সেই সহায়তা নিয়ে এসব জায়গায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে এবং গুজব ছড়াচ্ছে। কূটনীতিকরা যাওয়ার পর অনেকেই বলেছেন ‘দিস ইজ শেম’। অনেকেই আমার কাছে তাদের অনুভূতি শেয়ার করেছেন, সবাই বলেছে ‘উই আর উইথ ইউ, আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি’। তোমাদের এটি ‘ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার, আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি’। মন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে সবার কাছে নোট পাঠিয়েছিলাম যে এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এটি নিয়ে যেন বিদেশি দূতাবাসগুলো বা কূটনীতিকরা গণমাধ্যমে কোনো বিবৃতি না পাঠায়। তাদের রাষ্ট্রীয় পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে এবং তারা সেটি মেনে চলেছে। সেজন্য গণমাধ্যমকে সেখানে ডাকিনি। তারাও গণমাধ্যমে কথা বলতে চাননি। তারা এটি মেনে চলেছেন। অতীতে এ ধরনের কিছু ঘটলেই আমাদের কূটনীতিকদের উদ্বুদ্ধ করা হতো কথা বলার জন্য। এবার আপনারা (গণমাধ্যম) করেননি সেজন্য আপনাদেরও ধন্যবাদ জানাই। মন্ত্রী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে এর পর তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আরব আমিরাতে ৫৪ জনকে শাস্তি এবং তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে। একইভাবে আরও কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশে গ্রেফতার ও দন্ড দেওয়া হয়েছে। সৌদি রাষ্ট্রদূতও জানিয়েছেন, সেখানেও গ্রেফতার করেছে। এসময় মন্ত্রী বলেন, আরব আমিরাত আমাদের দেশ থেকে শ্রমিক নেবে না বলে যে খবরটি এসেছে এটা ভিত্তিহীন। যাচাই-বাছাই না করে এ ধরনের খবর দেওয়া সঠিক হয়নি। আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন এ ধরনের সিদ্ধান্ত তারা নেয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যারা বিদেশে গ্রেফতার হয়েছে তাদের ওই সব দেশের অভ্যন্তরীণ আইনে করা হয়েছে।