স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এতে মন খারাপের কিছু নেই। এখন যেখানে দিয়েছে, সেখানে কাজ করতে পারলে করব, আর অপারগ হলে চলে যাব।’ ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা। গত শুক্রবার কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পুনর্বণ্টনে এম সাখাওয়াত হোসেনকে স্বরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা হয়।
ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমার যতটুকু করার সাধ্য ছিল, করে আসছি।’ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা প্রসঙ্গে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এখন যেখানে দিয়েছে, সেখানে কাজ করতে পারলে করব, আর অপারগ হলে চলে যাব।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হওয়ার পর গত ১২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এম সাখাওয়াত হোসেন। ওইদিন আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়া আওয়ামী লীগকে ‘গ-গোল না পাকিয়ে নতুন মুখ নিয়ে দল গোছানোর’ পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। দেশের জন্য আওয়ামী লীগের অবদানের কথা তুলে ধরে ওইদিন সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এটা অনেক বড় পার্টি। আই হ্যাভ লট অব রেসপেক্ট ফর আওয়ামী লীগ। একসময় বাঙালিদের ভরসার জায়গা ছিল এই পার্টি। বায়ান্ন, ঊনসত্তরের গণ আন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অবদান ব্যক্তিগত কোনো কারণে নষ্ট করবেন না। এটা জাতীয় সম্পদ। আপনারা আসুন।’ প্রশ্নের জবাবে এই উপদেষ্টা বলেছিলেন,‘ আওয়ামী লীগকে বলব, এমন কিছু করবেন না যাতে জীবন বিপন্ন হয়। আপনারা রাজনৈতিক দল হিসেবে দলকে গুছিয়ে নিন। নির্বাচন হলে অংশ নিন। জনগণ ভোট দিলে ভোটে যাবেন। তবে প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন দেখলে হাজার-হাজার মানুষের রক্ত ঝরবে।’ ভারতে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরার পরামর্শ দিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, ‘আপনি ভালো থাকেন, আবার আসেন। আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু গ-গোল পাকানোর মানে হয় না, এতে লাভ হবে না। বরং লোকজন আরও ক্ষেপে উঠবে।’ ওইদিন তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এক বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘উপদেষ্টাদের কেউ-কেউ খুনিদের পুনর্বাসন করার বক্তব্য দিচ্ছেন। আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আপনি উপদেষ্টা হয়েছেন। খুনি হাসিনাকে পুনর্বাসনের বক্তব্য যারা দিতে চায়, আমরা ছাত্র-জনতা যেভাবে তাদের উপদেষ্টা বানিয়েছি, ঠিক একইভাবে গদি থেকে ছুড়ে নামাতে দ্বিধা করব না।’ ওই রাতে এম সাখাওয়াত হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। গত ১৩ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে অভিযোগ করেন, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের একটি বড় দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করতে বলেছেন। সেই একই জনতা কোনোভাবেই তার সৎ পরামর্শ মেনে নিতে পারেনি, উল্টো তারা আমার মায়ের মতো একই পরিণতি ভোগ করার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে হুমকি দিয়েছে।’ এসব ঘটনার পর চাপে পড়েন সাখাওয়াত হোসেন। তাকে উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার গুঞ্জন ওঠে। ধারণা করা হচ্ছে, এসবের জেরেই তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।