দেশে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে অন্তর্বর্তী সরকার ও দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বুধবার রাতে নিজের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ আহ্বান জানান তিনি।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্বের চার জেলা ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যাদুর্গত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আশ্রয়হীনদের আশ্রয়, খাবারসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সহায়তা দিতে। বিপদের এই সময়ে আমাদের অবশ্যই একে অন্যের পাশে থাকতে হবে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দেশের আট জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যা আরও বিস্তৃত হতে পারে। ইতোমধ্যে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। বাড়িঘর প্লাবিত হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো মানুষ। মঙ্গলবার রাত থেকে পাহাড়ি ঢলে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন এসব জেলার মানুষ। এদিকে গতকাল বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ জানান, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক বন্যার প্রকোপে বন্যা উপদ্রুত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দেশের সামর্থ্যবান ও ধনী ব্যক্তিদের বন্যার্তদের সাহায্য সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানান। সামগ্রিক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়েই বন্যাদুর্গত মানুষ নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে আবারও নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাবেন। এই কঠিন সময়ে আমাদের সবাইকে ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
রুল খারিজ, তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে বাধা নেই : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার বন্ধে আবেদনকারী রিট চালাতে না চাওয়ায় (নন প্রসিকিউশন) রুল খারিজ করে দিয়েছেন হাই কোর্ট। গতকাল বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এ আদেশের ফলে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে আর কোনো বাধা নেই।
২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকী লিনা হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন। রিটে কোনো পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য প্রকাশ, প্রচার, সম্প্রচার, পুনঃউৎপাদন না করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তথ্য সচিবের প্রতি নির্দেশনা চেয়েছিলেন। রিটে বলা হয়, তারেক রহমান একজন পলাতক আসামি। তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করে ও বেআইনিভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন। একজন পলাতক আসামির বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার হতে পারে না। যাকে আদালত খুঁজে পাচ্ছেন না, তার বক্তব্য প্রচারযোগ্য নয়। আদালতে ওই রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন (প্রয়াত), অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, অ্যাডভোকেট এস এম মুনীর ও অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম (তৎকালীন এমপি)। পরদিন রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ তারেকের বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রুল জারি করেন। রুলে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচার নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। তথ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, পররাষ্ট্রসচিব, আইজিপি, বিটিভির মহাপরিচালক, বিটিআরসির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। গতকাল আদেশের পর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের জানান, এ রিট পিটিশনের পিটিশনার আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকা লিনা। আজকে (গতকাল) মামলা তালিকায় ছিল। তিনি হাই কোর্টে এসে বলেছেন, এই রিট আর তিনি চালাতে চান না। নন প্রসিকিউশন করতে চান। অর্থাৎ এ রিট পিটিশনের আর কোনো অস্তিত্ব নেই। আদালত বলেছেন, তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারের ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, এখন থেকে আর এর কার্যকারিতা নেই। অর্থাৎ তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে আর আইনি কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।