বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী দেশের চলমান বন্যা প্রসঙ্গে বলেছেন, তার ৭৭ বছর বয়সে কখনো এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখেননি। বন্যার পানি এত বেশি যে, কুমিল্লা শহরে এক ইঞ্চি মাটিও দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বন্যা সংকট কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলা করে এর স্থায়ী সমাধান হওয়া উচিত। ভারত বাংলাদেশকে না জানিয়ে বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে (এই সমস্যার) সমাধান হওয়া উচিত। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
মনিরুল হক চৌধুরী আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ প্রতিটি অঙ্গসংগঠন বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় বিএনপির স্থানীয় সব নেতা নিজ নিজ এলাকায় রয়েছেন। বন্যা শুরুর পর থেকে চাল, ডাল চিড়া মুড়িসহ শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। শনিবার থেকে রান্না করা খাবার বিতরণ শুরু করেছেন।
তিনি জানান, বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ে ইতোমধ্যে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলের সিনিয়র নেতারাও বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা এলাকার নেতা-কর্মী সমন্বয় করে ত্রাণ বিতরণ করছি। তিনি বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে কেউ যেন খাবারের অভাবে কষ্ট না পায় সে জন্য সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, খেতের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বন্যা-পরবর্তী ফসল ফলাতে বীজের জোগান দেব।
আওয়ামী লীগের শাসনামল প্রসঙ্গে মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ১৫ বছরে দেশের সর্বনাশ বলতে যা বোঝায় আওয়ামী লীগ সবই করেছে। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যা তারা দলীয়করণ করেনি। বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম, প্রতিটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ করেছে। লোভে, প্রলোভনে অথবা ভয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীলরা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সরকারের এবং সরকারি দলের দলীয় ক্যাডারের মতো আচরণ করেছে। শুধু ক্ষমতায় থাকার লালসায় আওয়ামী লীগ জাতিকে, রাষ্ট্রকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। কারাগারে বন্দি করা হয় গণতন্ত্রকামী হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে। ভিন্নমতকে দমন করতে আয়নাঘরের মতো নিষ্ঠুরতম স্থানে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হতো।
উত্তরণের পথ কী- জানতে চাইলে এই বিএনপি নেতা বলেন, আমরা যাত্রা শুরু করেছি। সহস্রাধিক ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আজকে দেশবাসী বাকস্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। বাস্তবতা হলো, গত ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন, মানুষের ক্ষোভ, বঞ্চনা, কষ্ট, ভয়, কথা বলতে না পারার যন্ত্রণা সবকিছুর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে। পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে, যার নেতৃত্বে ছিলেন তরুণরা। মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, আওয়ামী সরকার বাংলাদেশকে যে অবস্থায় নিয়ে গেছে, সেখান থেকে আল্লাহ ছাড়া আমাদের কেউ টেনে তুলতে পারবে না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ অবস্থা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছে। আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের উচিত অবিলম্বে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, গত ১৭ বছরে রাজনৈতিকভাবে যে মানুষটির ওপর সবচেয়ে বেশি নিপীড়ন চালানো হয়েছে তিনি হলেন বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এই নিপীড়নের বর্ণনা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ওনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার। সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে। সেই দলকানা বিচারকদের বিরুদ্ধেই আজ দেশ-জনতা জেগেছে। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে তাঁর প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে এ নিয়ে তিনি কোনো ধরনের আক্ষেপ করেননি। তিনি রাজনীতির জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। নিজের জীবনের চেয়ে তিনি দেশকে বেশি ভালোবাসেন, তিনি আপসহীন। দেশ ও জাতির কল্যাণে ও স্বার্থে আল্লাহ যেন বেগম খালেদা জিয়ার নেক হায়াত বৃদ্ধি করেন এবং পরিপূর্ণ সুস্থতা দান করেন, এই কামনা করি।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এ মুহূর্তে বিএনপির প্রত্যাশা কী- জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে সুশাসন ফিরিয়ে আনা। আইনের শাসন ফিরিয়ে আনা। রাজনীতির প্রতি জনগণের যে অনীহা ছিল, তা ফিরিয়ে আনা। যেসব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ভেঙে পড়েছিল সেসব স্বচ্ছতার সঙ্গে পুনর্গঠন করা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। যাতে মানুষ নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের জন্য সময় বেঁধে দিতে চাই না। আমরা আশা করব, যত দ্রুত সম্ভব একটা গ্রহণযোগ্য সময়ের মধ্যে ভোটের আয়োজন করবে বর্তমান সরকার। যেখানে সব দলমতের মানুষ ভয় ছাড়া, কোনোরকম চাপ ছাড়া নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে কার্যত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে আমাদের নেতাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেশের বাইরে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। প্রহসনের বিচারে তার বাকস্বাধীনতাও হরণ করা হয়েছিল। তাকে অধিকারবঞ্চিত করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তিনি দেশে ফিরবেন ইনশা আল্লাহ।
বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা প্রসঙ্গে মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, বিএনপি সাংগঠনিকভাবে যথেষ্ট গোছানো আছে। অতীতে নানাভাবে আমাদের নেতা-কর্মীদের ভয় ও প্রলোভন দেখানো হয়েছে। কিন্তু আমরা স্বৈরশাসকের চোখরাঙানি ও নিপীড়ন অত্যাচারের কাছে মাথা নত করিনি। শত নিপীড়ন-নির্যাতনের মাঝেও একটি আদর্শিক দল হিসেবে বিএনপি শক্তিশালী অবস্থানে আছে। যে কোনো সময় নির্বাচন হলে আমরা আশাবাদী জনগণের ভোটে আমরা আবার ক্ষমতায় ফিরে আসব, ইনশা আল্লাহ।