বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে অন্তত চারটি ইস্যু। এগুলো হলো- সরকারের মেয়াদ, রোডম্যাপ, নির্বাচন ও সংস্কার। এছাড়া আসন্ন সংলাপে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনায় ৩১ দফার বিষয়টিও আলোচনায় তোলা হয়।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকাল নিয়ে এসব বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন নেতারা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (অনলাইনে), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (অনলাইনে), সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (অনলাইনে), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম) ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, গণ অভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকার কতদিন ক্ষমতায় থাকবে এটা জনগণ যেমন জানতে চায়, আমরাও জানতে চাই। আমরা যৌক্তিক সময়ের কথা বলেছি, আমাদের চাহিদার কথাও সরকারকে জানিয়েছি। তারা এখনো নির্বাচনের রোডম্যাপও ঘোষণা করেনি। আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই, যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবে। কারণ রাজনৈতিক দলই রাষ্ট্রের সব সংস্কার কাজ ভালোভাবে করতে পারবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় দুই মাসের কাজের পর্যালোচনা প্রসঙ্গ তুলে একাধিক স্থায়ী সদস্য বিষয়টি আলোচনা করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, সরকার আগামী দিনের রাষ্ট্র বিনির্মাণে কী চিন্তা করছে, নির্বাচনি রোডম্যাপও এখনো ঘোষণা করা হয়নি, সরকার কখন নির্বাচন দেবে, রাষ্ট্র সংস্কার কীভাবে করবে, রাষ্ট্রের সব সংস্কার আগে নাকি পরে নির্বাচন হবে- এসব নিয়ে জনগণের মনে এখনো প্রশ্ন রয়েছে। এসব প্রশ্নের উত্তর সরকারকে জাতির সামনে দ্রুত পরিষ্কার করার কথা বলেন কেউ কেউ। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গঠিত ছয়টি কমিশনের কার্যক্রম আলোচনায় তোলেন দুজন নেতা।
রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনায় গুরুত্ব পাচ্ছে ৩১ দফা : সূত্র জানিয়েছে, সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের সংলাপের বিষয়টি আলোচনায় তোলা হয়। স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনিক সংস্কারকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাধান্য দেওয়া উচিত। রাষ্ট্র সংস্কারের ছয়টি কমিশনের কাছে সুনির্দিষ্ট দলীয় অবস্থান তুলে ধরার বিষয়ে নেতারা মত দেন। এ ব্যাপারে বিএনপির ৩১ দফার রূপরেখার মধ্যেই সব সংস্কার প্রস্তাব আছে, সেই আলোকে অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রস্তাব দেওয়ার ব্যাপারে সবাই মতামত দেন। পাশাপাশি দ্রুত প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় বৈঠকে। রাষ্ট্র সংস্কারে দলীয় এজেন্ডা ঠিক করতে ইতোমধ্যে ছয়টি কমিটি গঠন করেছে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি। বিষয়ভিত্তিক এ কমিটিগুলো দলের কর্মকৌশল নির্ধারণের পাশাপাশি অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করবে। গঠিত ছয়টি কমিটি হলো- রাষ্ট্র সংস্কার, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, প্রশাসন সংস্কার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, নির্বাচন কমিশন এবং ব্যাংকিং ও বাণিজ্য। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহকে।
বৈঠকে কেউ কেউ বলেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে কী ধরনের সংস্কার আনা উচিত, নির্বাচন সামনে রেখে কোন কোন খাতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত তা নিয়ে নেতারা মতামত দেন।
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।