আগামী ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কমলা হ্যারিসের নির্বাচনি তৎপরতায় এবার সামনে এসেছে একে-অপরের ‘ফিটনেস’ প্রসঙ্গ। কমলা হ্যারিস এ বিষয়টি সামনে এনেছেন। তিনি বোঝাতে চাইছেন, তার বয়স থেকে ১৯ বছর বেশি বয়সি ট্রাম্প মোটেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিট নন। তিনি এই ইস্যুতে ভোটারদের নিজের দিকে টানতে চাইছেন। প্রসঙ্গত, জনমত জরিপ অনুযায়ী দুই প্রার্থীই জনসমর্থনের দিক থেকে প্রায় সমানে সমান রয়েছেন। গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, জমে উঠেছে কমলা হ্যারিস ও ট্রাম্পের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচার-প্রচারণা। এরই মধ্যে কমলা হ্যারিস তার স্বাস্থ্যগত মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। যেখানে দেখানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য তিনি পুরোপুরি ফিট। এর পর কমলা প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফিটনেস নিয়ে। কারণ ট্রাম্প তার মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশ করেননি। একই সঙ্গে কমলা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে অভিযোগ করেছেন যে, তিনি আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি ফিট কিনা, তা মার্কিন জনগণের সামনে প্রকাশ করতে চান না। আসলে তিনি বয়সের কারণে ফিট নন। এ নিয়ে তিনি চ্যালেঞ্চও ছুড়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের বয়স বর্তমানে ৭৮ এবং কমলার ৫৯ বছর। তাদের মধ্যে ফারাক ১৯ বছরের। এদিকে ট্রাম্পের মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশ না করে তার প্রচারণা দল ডাক্তারের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ট্রাম্পের স্বাস্থ্য পুরোপুরি ঠিক আছে। ট্রাম্পের প্রচার শিবির জানিয়েছে, তাদের প্রার্থী নির্বাচনি প্রচারণায় খুবই ব্যস্ত এবং ট্রাম্পের মতো কমলা হ্যারিসের নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর মতো শক্তি নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনি যুদ্ধের ডামাডোলে একে-অপরকে নাস্তানাবুদ করতে চাইছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস। কমলা তার স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করে দাবি করছেন, তার শারীরিক অবস্থা ‘দুর্দান্ত’। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য সক্ষম এবং যোগ্য। অন্যদিকে অক্ষম ও অযোগ্য বলেই ট্রাম্প তার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করেননি। কমলা প্রচারণায় দাবি করছেন, ‘আমার রিপাবলিকান দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন জনগণকে জানাতে চান না যে তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ফিট বা সক্ষম কিনা। তিনি অযোগ্য বলেই বিষয়টি চেপে যাচ্ছেন।’ জবাবে ট্রাম্পের শিবির বলছে, ‘তার (ট্রাম্প) মতো দম বা স্ট্যামিনা কমলা হ্যারিসের নেই।’
কৃষ্ণাঙ্গ ভোট সংকটে কমলা : কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারকে আকৃষ্ট করতে কমলা হ্যারিস কিছুটা সচেষ্ট হলেও ২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেনের তুলনায় তা কম বলে নিউইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা কলেজ পরিচালিত সর্বশেষ এক জরিপে জানা গেছে। ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবরের মধ্যে পরিচালিত এই জরিপে অংশগ্রহণকারী কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারের প্রতি ১০ জনের আটজনই কমলা হ্যারিসকে ভোট দানের কথা জানিয়েছেন। জো বাইডেনের ব্যাপারে এমন মনোভাব পোষণকারী (নির্বাচনের দৌড় থেকে সরে যাওয়ার আগ মুহূর্তে অর্থাৎ গত জুলাইয়ে) কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারের হার ছিল ৭৪ শতাংশ।
তবে ২০২০ সালের নির্বাচনে ৯০ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গের ভোট পেয়েছিলেন জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী করতে নতুন প্রজন্মের ভোটারের পাশাপাশি কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরাও সংকল্পবদ্ধ বলে মনে করা হলেও বাস্তবে তার শতভাগ প্রতিফলন ঘটছে না বিভিন্ন জরিপে। এমনি অবস্থায় রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প কমলা হ্যারিসের বর্ণ পরিচয় নিয়ে প্রশ্নের অবতারণা করায় স্বল্পশিক্ষিত ভোটারের অনেকেই বিভ্রান্ত। আর এমন বিভ্রান্ত দূর করে কৃষ্ণাঙ্গ ভোট ব্যাংকের পুরোটাই কমলার পক্ষে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মাঠে নেমেছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। উল্লেখ্য, সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ ভোটের ১৫ শতাংশ ট্রাম্পকে সমর্থন দানের কথা জানিয়েছেন। গত নির্বাচনে ট্রাম্পকে ৯ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ ভোট দিয়েছিলেন। কেন এই অবস্থা, তা নিয়ে চলছে নানা পর্যালোচনা। যদিও কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের নারী ভোটারের শতভাগ কমলার পক্ষে রয়েছেন।
পুরুষ ভোটারের এই ভিন্নমতের অবসানে বারাক ওবামা কতটা অবদান রাখতে সক্ষম হন সেটি এখন দেখার পালা।