আর মাত্র কদিন পরই ঈদুল আজহা। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে মহিমান্বিত উৎসবের নাম ঈদুল আজহা। এই ঈদে খুশি, ত্যাগ, তাকওয়া ইত্যাদির সঙ্গে সঙ্গে সচেতনও থাকুন। তাহলেই কোরবানি আপনার জীবনের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে। কোরবানির ঈদ মানে মাংস খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। তবে সুস্থ থাকার জন্য একটু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থেকেই মাংস খাওয়া উচিত। এ সময় স্বাভাবিকভাবেই বেশি পরিমাণে মাংস খাওয়া হয়ে থাকে। অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার ফলে ঈদ-পরবর্তী বেশকিছু শারীরিক অসুবিধা দেখা দিতে পারে। তাই এ সময় সবাইকে খাদ্য গ্রহণের ব্যাপারে একটু সচেতন ও সাবধানী হতে হবে। ঈদুল আজহার উৎসবে সুস্থ থাকার বা ফিটনেস ধরে রাখার কিছু টিপস—
ঈদে কখন, কতটুকু কীভাবে খাবেন?
>> কোরবানির ঈদে যেহেতু লাল মাংস (গরু, খাসি) ছড়াছড়ি, তাই মাংস খেতেই হয়, কিন্তু যখন খাবেন, তখন একবারে অল্প পরিমাণে খান। কেননা, লাল মাংসে অনেক ফ্যাট থাকে।
>> আস্তে আস্তে খাওয়া শুরু করুন, পরিমিত আহার করুন। সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে উৎসবের আনন্দ উপভোগ করুন।
>> বেশি ক্ষুধা লাগিয়ে না খেয়ে অল্প ক্ষুধা লাগলে খান, এতে কম খাওয়া হবে, খাবার আগে পানি খেয়ে নিন, অথবা দাওয়াতে যাওয়ার আগে সালাদ, ফল ইত্যাদি কম ক্যালরির সহজ পাচ্য খাবার বা পানীয় খেয়ে নিন, তাহলেও কম খাওয়া হবে।
>> লাল মাংস, যেমন—গরু, খাসির মাংসে যে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বি থাকে, যা স্থূলতা বাড়ানোর পাশাপাশি, রক্তনালিতে চর্বি জমায়, ফ্যাটি লিভারের প্রাদুর্ভাব বাড়ায়, রক্তচাপ বাড়ায়, ডায়াবেটিস বাড়ায়, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক এবং ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে এই লাল মাংসের কারণে। মাংস বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রিকের/আলসারের সমস্যা হতে পারে।
>> আমাদের দৈনিক খাদ্য তালিকায় চর্বিজাতীয় খাদ্য থাকবে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ। এবং তার মধ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকবে মাত্র ৭ শতাংশ।
>> ভাত জাতীয় খাবার অল্প পরিমাণে খেলে ভালো।
>> প্রতি বেলা মাংস না খেয়ে একবেলা হলেও মাছ খান। যেমন : রাতের খাবারে মাছ রাখতে পারেন। মাছে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাট, যা শরীরের জন্য ভালো।
>> কোনো দিন বেশি মাংস খাওয়া হয়ে গেলে, পর দিন সবজি, সালাদ, ফল, ডাল খেয়ে ব্যাল্যান্স করুন।
>> মাংস মানেই আমিষ। এই আমিষের চাহিদা পূরণে, প্রতিদিন বা প্রতি-বেলা লাল মাংস না খেয়ে ডাল, মাছ, কম ফ্যাটের মুরগি ইত্যাদি খেতে পারেন।
>> মাংস, পোলাও, বিরিয়ানি ইত্যাদি গুরুপাক খাবার যখন খাবেন, তখন খাবারের সঙ্গে প্রচুর সালাদ খাবেন। কারণ সালাদ খাবার হজমে সাহায্য করে।
>> এ ছাড়া প্রতি বেলার খাবারে অবশ্যই বেশি বেশি সবজি খাবেন।
>> আঁশ বা ফাইবার জাতীয় খাবার রাখবেন প্রতি বেলার খাবারের তালিকায়। কারণ এই আঁশ হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়, চর্বিও জমতে বাধা দেয়। এই আঁশ আমরা পেতে পারি রান্না বা কাঁচা শাকসবজি, ফল-মূল, সালাদ, লাল আটা, বাদাম ইত্যাদি থেকে।
>> সকালে উঠেই লেবু আর মধু এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে গুলে খেলে তা হজমের জন্য এবং মেদ কমাতে সহায়ক।
>> বার-বি কিউ, গ্রিল করা মাংস খান। ভাজা বা ভুনা, মসলাদার মাংস স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এগুলোতে ক্যালরি বেশি থাকায় ওজনও বাড়তে পারে।
>> মাংসের যে জায়গায় চর্বি কম, সেখানকার মাংস খেতে পারেন, যেমন : রানের মাংস।
>> মাংসের চর্বি পরিহার করুন, চর্বি/কোলেস্টেরল যুক্ত অঙ্গ, যেমন : মগজ, কলিজা ইত্যাদি যথাসম্ভব কম খান বা বাদ দিন।
>> রাতে পর্যাপ্ত (৭-৮ ঘণ্টা) ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
>> যাদের স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ফ্যাটি লিভার, কোলেস্টেরল, কিডনি সমস্যা, হৃদরোগ রয়েছে তারা অবশ্যই ডাক্তারের বা পুষ্টিবিদের পরামর্শমতো ও পরিমিত পরিমাণে খাবেন।
রোগীদের জন্য সচেতনতা
>> প্রাণীজ মাংস বিশেষ করে রেড মিট বা লাল মাংসে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা হৃদরোগ বা স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এই ফ্যাট শরীরের আর্টারিগুলোর দেয়ালে প্লাকের সৃষ্টি করে। এরা রক্তনালিগুলোর ভেতরে জমা থেকে রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে রক্তচাপও বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া এরা শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মাংস ক্ষতিকর। সে ক্ষেত্রে এসব মাংস একটু কম পরিমাণে খেলে ভালো।
>> রেড মিটে হেমি (যবসব) নামক এক ধরনের প্রোটিন রয়েছে। এটি শরীরের ভিতরে বিক্রিয়া করে কার্সিনোজেনিক এন-নাইট্রিসো পদার্থে রূপান্তরিত হয়। ফলে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের রেড মিট খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।
>> যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা বিশেষ করে এই ঈদে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। আপনার দৈনিক খাদ্যাভ্যাসে যতটুকু মাংস বরাদ্দ থাকে তার থেকে বেশি মাংস খাওয়া উচিত নয়।
>> গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে কোরবানির মাংস যেন পুরোপুরি সেদ্ধ হয় এবং খুব ভালোভাবে রান্না করা হয়। আধা সেদ্ধ বা একেবারে কাঁচা মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। বাসি এবং অতিরিক্ত মাংস পরিহার করুন।
উৎসবে একটু হলেও আপনার স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখুন। নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি ব্যায়ামটাও চালিয়ে যান আগের মতোই। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।