অনেক মেয়ে এবং মেয়ের মায়েদের ধারণা মাসিক বেশি হলে শরীরের সব দূষিত রক্ত বের হয়ে যায়। তাই বেশি রক্তস্রাব ভালো। এটা সম্পূর্ণ ভুল। আসলে শরীরের ভালো রক্তই জরায়ুর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় রাসায়নিক প্রক্রিয়ার জন্য রং বদল হয় ও তরল হয়। দূষিত রক্ত বলতে কিছু নেই।
এক মহিলার বয়স ৪২/৪৩, সমস্যা অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের ফলে রক্তশূন্যতা, দুর্বলতা। বিগত ৪-৫ বছর থেকে এরকম হচ্ছে। জিজ্ঞেস করা হলে বলেন, এতদিন চিকিৎসা করাননি। তখন তার বক্তব্য, মাসিক বন্ধ হওয়ার আগে তো এরকম হতেই পারে। এভাবেই আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাবে। এটাও একটি ভুল ধারণা। ঋতু বন্ধের আগে ঋতুস্রাব পরিমাণে কম হওয়ার কথা এবং অনেক দিন পর পর হওয়ার কথা। Oligomenorrhea বেশি হলে সেটা অস্বাভাবিক। তখন অবশ্যই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ক্যান্সারের সম্ভাবনা আছে কিনা দেখতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সাময়িক হরমোন চিকিৎসা চলতে পারে তবে জরায়ু অপসারণ করাই ভালো।
Dysfunctional Uterine Bleeding.(DUB)
Abnormal Uterne Bleeding(AUB)
DUB এর বর্তমান নাম হচ্ছে— Abnormal Uterine Bleeding. (AUB) কে আমরা এভাবেও বলতে পারি—
(১) Menorrhagia অতিরিক্ত ঋতুস্রাব-এ ধরনের উপসর্গে সাধারণত মাসিক নিয়মিত মাসে মাসে হবে। তবে পরিমাণ এবং স্থায়িত্ব দুটোই বেশি।
অতিরিক্ত ঋতুস্রাব কী কারণে হয়?
জরায়ুর টিউমার (Fibroid), অ্যাডোনো মায়োসিস (Adeno Myosis), পেলভিক এন্ডোমেট্রিওসিস (Pelvic Endometriosis), জরায়ুতে স্থাপিত কয়েল (কপারটি), টিউবো ওভারিয়ান মাস (Chronic Tubo Ovarial Mass), জরায়ুর যক্ষ্মা প্রাথমিক পর্যায় (Tuberclar Endometritis Carly Cases), জরায়ুর উল্টোভাবে স্থাপন (Retroverted Uterus), ওভারির গ্রানুলোসা সেল টিউমার।
এ ছাড়াও সিস্টেমিক কিছু কারণের জন্যও অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হতে পারে। যেমন— হার্ট ফেইল্যুর এবং উচ্চরক্তচাপ। হরমোন জনিত কারণেও অতিরিক্ত ঋতুস্রাব হতে পারে থাইরয়েড গ্রন্থির গণ্ডগোল। আরও যেমন— রক্তকণিকার সমস্যা, রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা, মস্তিষ্কের গ্রন্থিসমূহের বিপত্তি।
অতিরিক্ত ঋতুস্রাব
সাধারণত রোগীর অভিযোগ রোগীর রক্তশূন্যতা। এভাবে রোগ নির্ণয় করা হয়। সবচেয়ে কার্যকরী হচ্ছে আল্ট্রাসনোগ্রাফির চিকিৎসা হয় কারণ অনুযায়ী। রোগী যদি বাচ্চা চায়, তাহলে শুধু টিউমার অপসারণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যেমন রোগীর ছেলেমেয়ে হওয়া সম্পূর্ণ হলে জরায়ু পর্যন্ত ফেলা যেতে পারে।
ঘন ঘন ঋতুস্রাব (Polymenorhoea)
নিয়মিতভাবে ঘন ঘন ঋতুস্রাব হওয়াকে পলিমেনোরিয়া বলে। স্বাভাবিকভাবে ২৮ দিন পর পর ৩-৭ দিনের জন্য মাসিক হয়। কিন্তু এই রোগে ১০-১৫ দিন পর পর ঋতুস্রাব হয়। যদি ঋতুস্রাবের পরিমাণ বেশি হয় তাহলে তাকে এপিমেনোরেজিয়া (Epimenorhagia) বলে। কিশোরী বয়সে ঋতুবন্ধের আগে, প্রসব ও গর্ভপাতের পরে এরকম অবস্থা হতে পারে। ওভারী বা ডিম্বাশয়ের কোনো অস্বাভাবিকতার কারণে এই সমস্যা হতে পারে। চিকিৎসা সাধারণত হরমোন দিয়ে করা হয়।
মেট্রোরেজিয়া (Metrorrhagia)
অনিয়মিত অতিরিক্ত ফোঁটা ফোঁটা রক্তপাত থেকে শুরু করে অতিরিক্ত রক্তস্রাব হতে পারে। এটা জরায়ু অথবা জননতন্ত্রের যে কোনো জায়গা থেকেই রক্তপাত হতে পারে। কারণসমূহের মধ্যে উটই, জরায়ুর টিউমার, জরায়ুর পলিপ এবং জরায়ু ও ওভারিয়ান ক্যান্সার থেকে হতে পারে। অনেক সময় পরীক্ষা করতে গিয়ে অথবা কোনো যন্ত্রের আঘাতেও রক্তপাত হতে পারে। যেমন— জরায়ুমুখের ক্যান্সার, জরায়ুসমূহের পলিপ, ক্ল্যামাইডিয়া অথবা যক্ষ্মার কারণে অথবা এন্ডেমেট্রিওসিসের কারণে হতে পারে। মাসিকের মাঝামাঝিও অনেক সময় রক্তপাত হতে পারে। যেমন— প্রসবের নালিমুখের সমস্যা, অনিয়মিত পিল সেবন, জরায়ুমুখের ঘা ইত্যাদি। কারণ বুঝে চিকিৎসা নেওয়া।
স্বল্প ঋতুস্রাব
যদি ৩৫ দিনের বেশি দিন পর ঋতুস্রাব হয় তাহলে অলিগোমেনোরিয়া বলা হয়। কারণ বয়সভিত্তিক-কিশোরী বয়সে এবং ঋতুবন্ধের আগে, অতিরিক্ত ওজন, অতিরিক্ত ব্যায়াম ও দুশ্চিন্তা, হরমোনজনিত কারণ, প্রোলাকটিন হরমোনের আধিক্য, থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য ও স্বল্পতা, পুরুদের হরমোন তৈরি করা ডিম্বাশয়ের টিউমার অথবা অ্যাডরেনা টিউমার, যক্ষ্মায় আক্রান্ত জরায়ুর ঝিল্লি, কিছু ওষুধ সেবন যেমন— ফেনোথায়াজিনস, সিমেটিডিন, মিথাইল ডোপা।
হাইপোমেনোরিয়া
যখন মাসিক ঋতুস্রাব পরিমাণে খুবই কম এবং দুই দিনের কম সময় থাকে তাকে হাইপো মেনোরিয়া বলে। কারণ— জরায়ুর ঝিল্লি যখন কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথবা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়, জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলে অথবা থাইরয়েডের সমস্যা হলে, অপুষ্টিজনিত কারণে।
সর্বোপরি, নিয়মিত অথবা অতিরিক্ত ঋতুস্রাব সব সময় খারাপ রোগের ইঙ্গিত। এটা কখনই স্বাভাবিক নয়। তাই বয়ঃসন্ধিকালে, প্রাপ্ত বয়সে অথবা ঋতুবন্ধের আগে যখনই এ ধরনের সমস্যা হয় তখন চিকিৎসা নিন।