শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা

এনজিনার লক্ষণ ও উপসর্গ

এনজিনার লক্ষণ ও উপসর্গ

আপনার বয়স চলি্লশের বেশি, কিছুদিন যাবৎ খেয়াল করছেন কাজকর্ম করতে গেলে আগের চেয়ে বেশি হাঁপিয়ে উঠছেন। যাচাই করার জন্য আগের মতো পরিশ্রম করার চেষ্টা করলে আরও বেশি হাঁপিয়ে যাচ্ছেন এবং শরীর বেশি ঘেমে যাচ্ছে। অত্যধিক গরম অনুভব করতে থাকেন, ফলে অনেক সময়ই গায়ের কাপড় ভিজে যাচ্ছে, মাথা ঘেমে চুল ভিজে চপচপ হয়ে যাচ্ছে, এক সময় আপনি বিশ্রাম নিতে বাধ্য হচ্ছেন। আগের মতো দ্রুত হাঁটতে পারছেন না। অনেক সময় পেট থেকে ঢেঁকুর তুলে গ্যাস বের করলে বা পানি পান করলে চাপ কমে গিয়ে আবার স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছেন। কারও কারও বুকে চাপ অনুভূত না হয়ে বুকের মাঝখানে বা ডানে-বামে ব্যথা অনুভূত হয়, তার সঙ্গে নিঃশ্বাস ঘন ঘন হয়ে আসা ও বুক ধড়ফড় করা বা তার সঙ্গে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। কখনো কখনো এসব উপসর্গের সঙ্গে মাথাঘোরা বা চোখে অন্ধকার দেখা বা চোখে শর্ষেফুল দেখার মতো অনুভূত হতে পারে। তবে শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই পানি খেলে, গ্যাসের ওষুধ খেলে বা গ্যাস বের করলে বা শুধু বিশ্রাম নিলেই এ ধরনের অসুবিধাগুলো সম্পূর্ণভাবে উপশম হচ্ছে এবং পরবর্তীতে আবার পরিশ্রম করতে গেলে আগের মতো একই ধরনের সমস্যায় পড়ছেন। তবে কখনো কখনো একই মাত্রার পরিশ্রম অনায়াসেই করতে পারছেন কোনোরূপ উপসর্গ ছাড়াই, আবার কখনো তা পারছেন না। এসব কিছু বিবেচনা করে অনেকেই এর জন্য পেটের গ্যাসকে দায়ী করে দীর্ঘসময় ধরে গ্যাসের মেডিসিন গ্রহণ করছেন। অনেকে গ্যাসের আরও পাওয়ারফুল মেডিসিন খুঁজতে গিয়ে অনেকবার গ্যাসের ওষুধ বদল করেছেন কিন্তু তাতে খুব ভালো ফল পাচ্ছেন না। অনেকের পরিশ্রম করার সময় বুকব্যথা বা বুকে চাপ অনুভূত করার সময় ঘাড়ে, চোয়ালে বা পিঠে ব্যথা ধরে থাকার মতো অস্বস্তি অনুভব হতে পারে।

উপরে বর্ণিত সমস্যাগুলোকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এনজিনা বলা হয়। তাৎক্ষণিক উদ্ভব ও তাৎক্ষণিক নিরাময় হওয়ার জন্য বেশিরভাগ মানুষই একে গ্যাসের উৎপত্তিকে দায়ী করে থাকেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই আরোগ্য লাভ করার ফলে মানুষের ধারণা আরও পরাভূত হয় যে এটা গ্যাসের জন্যই হচ্ছে এবং গ্যাসের ওষুধ নিয়মিত সেবন করতে থাকেন কিন্তু গ্যাসের ওষুধ সেবন করেও এর থেকে মুক্তি পান না। হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ফলে পরিশ্রমকালীন বা তাড়াহুড়া করে স্বাভাবিক কর্মসম্পাদনের সময়ে হৃৎপিণ্ড প্রয়োজনীয় পরিমাণে রক্ত সরবরাহ না পাওয়ার ফলে এনজিনার অনুভূত উপলব্ধি হয়ে থাকে এবং কাজ বন্ধ করলে বা বিশ্রাম গ্রহণ করলে হৃৎপিণ্ডের রক্ত সরবরাহের চাহিদা কমে যাওয়ায় এনজিনার ব্যথা দূরীভূত হয়ে যায়। আপনি গ্যাস বের করেন অথবা না করেন, আপনি গ্যাসের ওষুধ সেবন করেন বা না করেন, আপনি পানি পান করেন অথবা না করেন তাতে কিছু যায় আসে না, আপনি বিশ্রাম গ্রহণ করলে কাজ বন্ধ করে দিলে অতিদ্রুত এ ব্যথা বা অস্বস্তি দূরীভূত হবে এটাই এনজিনার স্বাভাবিক আচরণ। এনজিনা হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ। তাই এমন হলে অবহেলা না করে দ্রুত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র

কনসালট্যান্ট, (কার্ডিওলজি), ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা। ফোন : ০১৯৭১-৫৬৫৭৬১

 

 

সর্বশেষ খবর