বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করায় দন্ডপ্রাপ্ত ৫৭ জন বাংলাদেশিকে ক্ষমা করে দিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রপতি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে এসব প্রবাসীকে ক্ষমা করে দেন আমিরাতের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। এ জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। গতকাল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, গত ২৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের। সেখানে বড় অংশজুড়ে ছিল ৫৭ জনের শাস্তি মওকুফের বিষয়টি। প্রধান উপদেষ্টা আমিরাতের রাষ্ট্রপতিকে প্রবাসী শ্রমিকদের ক্ষমা করে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর কথা রেখেছেন।
শফিকুল আলম বলেন, তাদের ক্ষমা করানো ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা মওকুফ করার এমন ঘটনা সংযুক্ত আরব-আমিরাতের ইতিহাসে বিরল। তবে সাজা মওকুফ করা হলেও তাদের সেদেশে না রেখে শিগগিরই বাংলাদেশে পাঠানোর কথা জানিয়েছে দেশটি। ক্ষমাপ্রাপ্ত এসব লোককে শিগগিরই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে। এদিকে ৫৭ বাংলাদেশিকে ক্ষমা করে দেওয়া আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চিঠি লিখেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চিঠিতে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ছাত্র-গণবিপ্লবের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশকারী ৫৭ জন বাংলাদেশি সংযুক্ত আরব আমিরাতের কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের ক্ষমা করার আপনার উদার সিদ্ধান্তের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগ আমি উপভোগ করছি। এই ক্ষমাশীলতার কাজটি শুধু সহানুভূতিশীল নেতৃত্বের উদাহরণই দেয় না বরং আমাদের দুই দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের স্থায়ী বন্ধনকে শক্তিশালী করার জন্য একটি বাহক হিসেবে কাজ করে। ড. ইউনূস আরও বলেন, আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইনের প্রতি আমাদের পূর্ণ সম্মান প্রকাশ করছি। আমাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে প্রস্থান করার আগে তাদের স্বাগতিক দেশগুলোর স্থানীয় আইন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ও শিক্ষিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছি। সেইসঙ্গে আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে এবং আমাদের জনগণের পারস্পরিক সুবিধার জন্য একসঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ। আমি সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের জন্য আপনার সুস্বাস্থ্য, সুখ, দীর্ঘ জীবন এবং অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধি কামনা করছি। উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করায় ৫৭ বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেন দেশটির একটি আদালত। তাদের মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে ১০ বছর এবং বাকি একজনকে ১১ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আমিরাতি নিউজ এজেন্সি (ডব্লিউএএম) জানিয়েছিল, কারাদন্ডের মেয়াদ শেষে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।