স্বৈরাচার পতনের ঠিক দুই দিন আগে ৩ আগস্ট ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল শিল্পী সমাজ। আর স্বৈরাচার পতনের ঠিক ৪১ দিন পর গতকাল শিল্পী সমাজ আবারও একই মঞ্চে মিলিত হলো। তবে এবারের আয়োজনটা ছিল বন্যার্তদের পুনর্বাসনের জন্য। ৩ আগস্ট ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার পতনের দাবিতে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন শিল্পীরা। আর গতকাল নেমেছিলেন বন্যার্ত অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে অর্থ তহবিলে। বৈরী আবহাওয়া ও দিনভর বৃষ্টির চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে শিল্পীরা এসেছেন অনুষ্ঠানস্থলে, উঠেছেন মঞ্চে আর গেয়েছেন জনপ্রিয় সব গান। বন্যার্তদের সাহায্যার্থে সুরের বন্যা বইয়ে দিলেন শিল্পীরা। আর দর্শক শ্রোতারাও অন্তরের সবটুকু ভালোবাসা নিয়ে এসে হাজির হন রবীন্দ্র সরোবরে। মানুষের প্রতি আর সুরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি বাধা হতে পারেনি। ঘড়ির কাঁটা ঠিক ৫টা বাজতেই মঞ্চে ওঠেন এ প্রজন্মের প্রতিভাবান গায়ক তানহা। প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এই শিল্পী পরিবেশন করেন আইয়ুব বাচ্চুর ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে, এরপর জেমসের ‘দশ মাস দশ দিন ধরে গর্ভে ধারণ’ ও ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’। এরপর দ্বৈতকণ্ঠে মঞ্চ মাতান তোসরা ও আতিকা। সদ্যপ্রয়াত মাইলসের শাফিন আহমেদের স্মৃতির প্রতি প্রথমেই এই দুই শিল্পী গেয়ে শোনান ‘ফিরিয়ে দাও আমার প্রেম, নীলা তুমি কি জানো না’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে সবশেষে তারা একটি র?্যাপ গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে মঞ্চ ত্যাগ করেন।
ট্রিপল ওয়ান আয়োজিত এই আসরে গানের ফাঁকে ফাঁকে শিল্পীরা বলেন, বৃষ্টি উপেক্ষা করে বানভাসি মানুষের জন্য আজ আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। তারা বানের জলে ভাসছে আর তাদের জন্য আমরা একটু বৃষ্টিতে ভিজতে পারব না তা তো হয় না। স্বৈরাচার পতনের পর আমরা নতুন করে স্বাধীনতা পেয়েছি। আর এই স্বাধীনতায় সব বিপদে দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমরা যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, ঠিক একইভাবে বন্যার্তদের সাহায্যার্থেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। এই ভালোবাসা অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে আরও সংগীত পরিবেশন করে ব্যান্ডদল ব্ল্যাক, প্রজন্ম বাউল, ব্লু জিন্স, শহরতলী ও তরুণ ব্যান্ড।
শিল্পীদের অনবদ্য পরিবেশনায় হিম শীতল বৃষ্টিতেও উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর প্রাঙ্গণে। দর্শক শ্রোতাদের একের পর এক গানের আবেদনে শিল্পী ও দর্শক শ্রোতাদের মাঝে তৈরি হয় ভালো লাগা এবং ভালোবাসার সেতুবন্ধন।