দেশে হৃদরোগে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন, ওষুধের প্রভাবসহ বিভিন্ন কারণে মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। রোগী বাড়ার সঙ্গে চিকিৎসাব্যবস্থার দুর্বলতা ও চিকিৎসকের সংকট প্রকট হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু হৃদরোগী নিয়ে বিপাকে পড়েন অভিভাবকরা। সারা দেশে শিশু কার্ডিয়াক রয়েছেন মাত্র ১৪ জন।
জন্মগত হৃদরোগে ভুগছে ছয় মাস বয়সি জুবায়ের আলী। রোগ শনাক্তের পর জরুরি ভিত্তিতে হার্টের সার্জারির কথা বলেছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। একমাত্র সন্তানকে বাঁচাতে সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা জোগাড় করেছে জুবায়েরের পরিবার। কিন্তু দুই মাস অপেক্ষায় থাকার পর মিলেছে অপারেশনের সিরিয়াল। কারণ হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে সার্জারির অপেক্ষায় থাকা কয়েক শ শিশু হৃদরোগীর বিপরীতে পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জন আছেন মাত্র কয়েকজন। শুধু শিশু হৃদরোগী নয়, তরুণ হৃদরোগীর সংখ্যাও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।
এ পরিস্থিতিতে ‘হৃদয়ের যত্ন হোক সর্বজনীন’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব হার্ট দিবস। হার্ট দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও সংগঠন সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি আয়োজন করেছে। সচেতনতা বাড়িয়ে হৃদরোগে মৃত্যু কমাতে জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত জানুয়ারিতে ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২ প্রকাশ করেছে। তাতে মৃত্যুর প্রধান ১৫টি করণ উল্লেখ করা হয়েছে। এ তালিকার শীর্ষে আছে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু বা হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু। হার্ট অ্যাটাক ও নানা ধরনের হৃদরোগে ২১ দশমিক ১২ শতাংশ মৃত্যু হচ্ছে। অর্থাৎ দেশে প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর একটি হচ্ছে হৃদরোগে। এ পরিসংখ্যান একটি বিপজ্জনক বার্তা দিচ্ছে বলে জনস্বাস্থ্যবিদ ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ‘হৃদ?রোগ দেশের মানুষের ওপর প্রবলভাবে জেঁকে বসেছে। তামাকের ব্যবহার, কায়িক পরিশ্রম কম করা, ওজন বৃদ্ধি, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য, লবণ বেশি খাওয়া এবং বায়ুদূষণের কারণে দেশে বাড়ছে হৃদরোগে মৃত্যু।’ জানা গেছে, ২০১৮ সালে দেশে শিশু হৃদরোগীদের শল্য চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ বা পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জনের সংখ্যা ছিল ১০। পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সোসাইটি অব বাংলাদেশের (পিসিএসবি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ জনে। সে অনুযায়ী গত ছয় বছরে দেশে শিশু হৃদরোগীদের শল্য চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ সার্জন বেড়েছে মাত্র চারজন।
শিশুদের হৃদরোগের চিকিৎসায় দক্ষ সার্জনের অভাব। হাসপাতালগুলোয় এ ধরনের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও সংকট। যদিও হাসপাতালগুলোয় এ ধরনের চিকিৎসা সেবাপ্রত্যাশী রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফলে ভর্তি ও সার্জারির জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে রোগী ও অভিভাবকদের। এ অবস্থায় শিশু হৃদরোগীদের সার্জারির জন্য বিদেশনির্ভরতাও বাড়ছে।