শিক্ষাসংস্কার কমিশন গঠনসহ শিক্ষাব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের রূপরেখা উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি)। এতে জাতীয় শিক্ষাক্রমে বাংলা, ইংরেজি এবং আরবি- এ তিনটি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছেন আয়োজকরা। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা বলেন, সব স্তরের পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচিতে জীবনমুখী দক্ষতা এবং বিষয়ভিত্তিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের যথাযথ সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় মুসলিমদের জন্য ফান্ডামেন্টালস অব ইসলাম বিষয় বাধ্যতামূলক করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন গবেষক ও শিক্ষা উদ্যোক্তা ড. এম আবদুল আজিজ। বক্তব্য রাখেন সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইউসুফ এম ইসলাম, সেন্টার ফর ইসলামিক থট অ্যান্ড স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শায়খ মুসা আল হাফিজ, গবেষক অধ্যাপক ড. আফরোজা বুলবুল, এমআইএসটি অধ্যাপক ড. সেলিনা রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ড. সৈয়দ শহীদ আহমাদ ও আনিসুর রহমান এরশাদ। অনুষ্ঠানে ড. এম আবদুল আজিজ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বহু-শিক্ষানীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা ছিল শাসকগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনাকে সাধারণ জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াস। এসব নীতিতে দেশের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও দর্শনকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এর ফলে পাঠ্যক্রমে খেয়ালখুশিমতো পরিবর্তন, রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় এবং অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে শিক্ষাব্যবস্থা প্রায় ধ্বংসের পথে এসে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য বক্তা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠনের মাধ্যমে একটি শিক্ষিত, নৈতিক এবং দক্ষ প্রজন্ম গড়ে তোলা সবার দায়িত্ব বলে তুলে ধরেন। এদিকে, বিআইআইটি শিক্ষা সংস্কারের লক্ষ্যে বেশকিছু সুপারিশ উপস্থাপন করে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় আশাআকাঙ্ক্ষা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে শিক্ষাদর্শন, ভিশন, মিশন এবং উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ঠিক করা। উচ্চশিক্ষার মান ধরে রাখার জন্য সংখ্যা না বাড়িয়ে গুণগত মানের দিকে নজর।
সেই সঙ্গে সব ধারার শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশ পরিচিতি, ইতিহাস ও সভ্যতা, সামাজিক বিজ্ঞান এবং ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ভাষাগত দক্ষতা ও কম্পিউটার দক্ষতা অর্জনকেও বাধ্যতামূলক করতে হবে। সব স্তরের পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচিতে জীবনমুখী দক্ষতা এবং বিষয়ভিত্তিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের যথাযথ সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় মুসলিমদের জন্য ফান্ডামেন্টালস অব ইসলাম বিষয় বাধ্যতামূলক করতে হবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে ‘প্রাসঙ্গিক ধর্মীয় কোর্স’ এবং সব স্তরের শিক্ষকদের জন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষণ প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। সব লেভেলের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান, ব্যবহারিক দক্ষতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান ৫০%, বিশেষায়িত জ্ঞান ২০%, জীবনমুখী দক্ষতা ১০%, নীতিনৈতিকতা ও মূল্যবোধ ১০%, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ ১০% রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।