ছয় বন্ধু। মোবারক হোসেন, এ টি এম মিজানুর রহমান, আসাদুজ্জামান মনির, প্রয়াত অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন সোহাগ, প্রকৌশলী এমদাদুল হক, আরিফ বিন বাদশা ও মাসুদ খান। একদিন তারা পরিকল্পনা করেন স্কুলে স্কুলে শিশুদের মাঝে ফল, ফুল ও ফসলের বীজ, চারা বিতরণ করবেন। ২০১৮ সালে তারা সেরনেটি বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া সংগঠনের ব্যানারে কাজ শুরু করেন। এ পর্যন্ত তারা কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া ও আদর্শ সদরের বিভিন্ন স্কুলের ১০ সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর মাঝে বীজ ও চারা বিতরণ করেছেন। এই সবুজ আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা বুড়িচং উপজেলার শংকুচাইল রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন। তিনি বলেন, তিনি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। সেখানকার সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন আইউব চৌধুরী। তিনি বৃক্ষপ্রেমী মানুষ ছিলেন। স্কুলের সামনে দুইটি জলপাই গাছ ছিল।
বছরে ওই গাছ থেকে জলপাই পেড়ে মাঠে জমা করা হতো। তারপর আইউব স্যার প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৫টি করে জলপাই দিতেন। সে স্মৃতি তার মনে দাগ কেটে আছে। তার মনে হতো ওই স্কুলের মতো সব স্কুলের সামনে যেন ফলের গাছ থাকে। এ ছাড়া স্যাররা তাদের বাড়িতে গাছ লাগানোর পরামর্শ দিতেন। সেগুলো করেই তাদের সময় কেটে যেত। সেই রীতি আবার ফিরে এলে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন আসক্তি থেকে বের করা যাবে। সঙ্গে মানুষের খাবারের চাহিদা পূরণের সঙ্গে প্রকৃতিও সতেজ থাকবে। সেই পরিকল্পনা থেকে বন্ধুদের নিয়ে নেমে পড়েন। তাদের আয়োজনে বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীরা সহযোগিতা করেন। তারা এই ফল-ফসলের প্রচারের উদ্যোগকে আরও ছড়িয়ে দিতে চান। গত ৩ অক্টোবর এমন আয়োজন করা হয় বুড়িচং উপজেলার শংকুচাইল রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে। এ সময় তিন শ’ শিশুর হাতে ছয় প্রকার বীজ তুলে দেন অতিথিরা। লাউ, শিম, কুমড়া, ঢ্যাঁড়স, বরবটি ও করলার বীজ বিতরণ করা হয়। তাদের রোপণ পদ্ধতিরও ধারণা দেওয়া হয়। ভালো ফলন হলে পুরস্কারেরও ঘোষণা দেওয়া হয়। কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন বলেন, শিশুদের বৃক্ষমুখী করতে পারলে অনেক দিকে লাভ। সময়ের অপচয় রোধের সঙ্গে প্রকৃতির ভারসাম্যও রক্ষা পাবে। কৃষি অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, শিশু ও তরুণদের কৃষিতে উদ্বুদ্ধ করা একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এতে দেশের কৃষি সম্প্রসারণ আরও এগিয়ে যাবে।