১৯৮৪ থেকে ২০২৪-এ ৪০ বছরে বাংলাদেশ ১১টি অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়েছে। গতকাল ইমরানুর রহমান ও সোনিয়া খাতুনের ইভেন্ট দিয়ে প্যারিস অলিম্পিকের মিশন শেষ হলো বাংলাদেশের। পদক লড়াইয়ের ধারেকাছে না গিয়ে একে একে দিদায় নিলেন বাংলাদেশের পাঁচ প্রতিযোগী। এ লজ্জা অবশ্য নতুন নয়, শুরু থেকেই ব্যর্থতা ছাড়া কিছু মেলেনি বাংলাদেশের।
লস অ্যাঞ্জেলেসে যখন অলিম্পিকে বাংলাদেশর অভিষেক হয় তখন বলা হয়েছিল, বড় কিছু অর্জন করতে দরকার শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা। দুনিয়াসেরা অলিম্পিকে সাফল্য পেতে সময় তো লাগবেই। ১৯৮৪ সালে অলিম্পিক গেমসে বাংলাদেশের টিম লিডার ছিলেন প্রখ্যাত ফুটবলার জাকারিয়া পিন্টু। ওই সময় তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘অলিম্পিকে বাংলাদেশ শিক্ষানবিশ হিসেবেই যাচ্ছে। এখানে শেখার অনেক কিছু রয়েছে। শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার শেষ নেই।’
সেই শুরু। ৪০ বছরেও শিক্ষানবিশি থেকে বের হতে পারল না বাংলাদেশ। অথচ বারবার কর্মকর্তারা প্রতিশ্রুতি দেন, ‘অলিম্পিকে ভালো ফলের জন্য সবকিছুই করব।’ কমনওয়েলথ ও এশিয়ান গেমসে শুধু পদক নয়, সোনাও জিতেছে বাংলাদেশ। অলিম্পিকে বরাবরই শূন্য। পদক না হয় বাদই গেল, ধরলাম এ সামর্থ্য কখনো হবে না ক্রীড়াবিদদের। সম্মানজনক অবস্থানে থাকতে যা দরকার তা কি করেছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ও সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনগুলো? পরিকল্পনার ছকই ঠিক করতে পারেনি। অলিম্পিক কর্মকর্তাদের কাছে পিকনিকেই পরিণত হয়েছে। সরকারি খরচায় পরিবারসহ বিদেশ ভ্রমণ ও মার্কেটিং করাটাই তাদের কাছে মুখ্য। সরকারের উচ্চমহল থেকে প্রতিবারই বলা হচ্ছে, ‘যতটুকু অর্থ তা ক্রীড়াবিদদের পেছনেই ব্যয় হবে।’ তা কখনো হয়নি। বিদেশ ভ্রমণে ক্রীড়াবিদদের চেয়ে কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সংখ্যাই বেশি।
চীনের মতো ক্রীড়ার উন্নত দেশ অলিম্পিক ঘিরে এখনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে। বাংলাদেশ সেখানে বড়জোর দুই মাসের প্রস্তুতি নিয়ে অলিম্পিকে উড়ে যায়। সে কারণেই তো ৪০ বছর পার হয়ে গেলেও অলিম্পিকে শিক্ষানবিশ বাংলাদেশ। ক্রীড়াবিদরা কেন পারছেন না এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। আছেন নিজেদের ভাগ্য বদলাতে। যে ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ অলিম্পিকে অংশ নেয়, তাতে ব্যর্থ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
প্যারিস অলিম্পিকেও বাংলাদেশের রুগ্নদশা কাটবে না-এ নিয়ে কারও সংশয় ছিল না। তার পরও এতটুকু আশা বলতে যা বোঝায় তা ছিল আর্চার সাগর ইসলাম ও অ্যাথলেট ইমরানুর রহমানকে ঘিরে। তারাও ভেসে গেলেন লজ্জার সাগরে। ১০০ মিটার দৌড়ে ইমরানুরের সেরা টাইমিং ছিল ১০.১১ সেকেন্ড। অথচ প্যারিস অলিম্পিকে ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বাজে টাইমিং (১০.৭৩) দিয়ে মিশন শেষ করলেন। সাগর, রবিউল রাফি ও সোনিয়া কেউ বলার মতো কিছুই করতে পারেননি। প্রতিবারই এমন হচ্ছে, শিক্ষানবিশ মানে তো কিছুই জানে না তা নয়। বাংলাদেশ যা দেখাচ্ছে তা অশিক্ষিতের মতোই। এভাবে আর কতদিন? এমন লজ্জা থেকে বাঁচতে সামনে আর কাউকে অলিম্পিকে পাঠানো ঠিক হবে কি না ভাববার সময় এসেছে।
বাংলাদেশের যত প্রাপ্তি এসএ গেমস ঘিরেই। তাও আবার কখনো পদক তালিকায় তিনে আসতে পারেনি। এভাবেই চলছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রীড়াবিদদের পারফরম্যান্স। কীভাবে উন্নতি করা যায় সেই ভাবনা কারও নেই।