রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের ড্রেসিং রুমে বসে নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলামরা অবাক চোখে দেখছেন উইকেটের দুই প্রান্তের দুটি বড় পাখা। বেশ জোরে জোরে ঘুরছিল পাখা দুটি। আগের রাতের এবং সকালের বৃষ্টিতে মাঠ ভারী হয়ে ছিল। বৃষ্টির পানিতে উইকেট ভেজা। ২৪ ঘণ্টা পর শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। তার আগে উইকেটের পানি শুকাতে এ ব্যবস্থা পিসিবির! সুপার সাকার, রোলার মেশিন থাকার পরও পুরনো যুগের এ পদ্ধতি দেখে অবাক হয়েছেন টাইগার ক্রিকেটাররা। রাওয়ালপিন্ডি আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামীকাল (আজ) রাওয়ালপিন্ডিতে ২৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। বাতাসের আর্দ্রতা হতে পারে ৭৯ শতাংশ। সারা দিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ। এর ফলে আজ খেলা দেরিতে শুরু হতে পারে। প্রথম টেস্ট শুরু হয়েছিল দেড় সেশন পর। বৃষ্টির জন্য গতকাল নাজমুল বাহিনীর অনুশীলন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যদিও মাঠের এক কোনায় উইকেটে অনুশীলন করেছেন টাইগাররা। অধিকাংশ সময়ই সাজঘরে বসে খোশগল্প করেছেন ক্রিকেটাররা।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হচ্ছে আজ। সিরিজটি দুই দেশের জন্যই মহাগুরুত্বপূর্ণ। প্রথম টেস্ট বাংলাদেশ জিতেছে ১০ উইকেটে। ঐতিহাসিক জয়ের পর সিরিজ জয়ের হাতছানি রয়েছে বাংলাদেশের। শান মাসুদের পাকিস্তানের জীবনমরণ টেস্ট এটা। সিরিজ হার থেকে বাঁচতে পাকিস্তানের জয়ের বিকল্প নেই। স্বাগতিকরা গতকাল ১২ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। জায়গা হয়নি বাঁ-হাতি দীর্ঘদেহী পেসার শাহিন আফ্রিদির। ফিরেছেন লেগ স্পিনার আবরার আহমেদ। টাইগারদের চূড়ান্ত একাদশ ঘোষণা করা হয়নি। অবশ্য নাহিদ রানার পরিবর্তে একাদশে ফিরতে পারেন ডান হাতি ফাস্ট বোলার তাসকিন। উইকেটে ঘাস ছিল গতকাল পর্যন্ত। প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিন বল লাটিমের মতো ঘুরেছে। সেজন্য স্বাগতিকরা দলে নিয়েছেন লেগ স্পিনার আবরারকে। টাইগারদের রয়েছেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদি মিরাজ। সাকিব বাঁ-হাতি স্পিনার এবং মিরাজ অফ স্পিনার। দুজনে আবার ব্যাটারও। এ অবস্থায় বাংলাদেশ এগিয়ে বেশ অনেকটা। গতকাল সকালে রাওয়ালপিন্ডিতে ৫ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। রাজধানী ইসলামাবাদসহ রাওয়ালপিন্ডি, পেশোয়ার, মারদান, খাইবার-পাখতুনখাওয়ার বিভিন্ন অংশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যদিও কোনো প্রকার ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল আফগানিস্তান-তাজিকিস্তান সীমান্ত।
প্রথম টেস্টে নাজমুল বাহিনী দুরন্ত পারফরম্যান্স করেছে। প্রথম ব্যাট করে দুই সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল স্বাগতিকরা। জবাবে ৫৬৫ রান করেছিল টাইগাররা। ১৯১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মুশফিক। ৯৩ রান করেছিলেন বাঁ-হাতি ওপেনার সাদমান ইসলাম, সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হক ৫০, লিটন দাস ৫৬ ও মেহেদি মিরাজ করেছিলেন ৭৭ রান। চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরির কাছাকাছি এসেও করতে না পারার একটা আক্ষেপ রয়েছে ৩৭ বছর বয়সি মুশফিকের। ৩৪১ বলে ২২ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি খেলে নতুন একটি মাইলফলক গড়েন সাবেক অধিনায়ক। তামিম ইকবালের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫ হাজার ক্লাবে নাম লেখালেন। আজ শুরু টেস্ট দুটি মাইলফলকের হাতছানি দিচ্ছে মুশফিককে। প্রথমত তামিমকে টপকে যাওয়ার হাতছানি। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৬ হাজারি ক্লাবে নাম লেখা। ৮৯ টেস্টের ১৬৪ ইনিংসে ৩৯.১১ গড়ে মুশফিকের রান ৫ হাজার ৮৬৭। আর মাত্র ১৩৩ রান করলেই তিনি ৬ হাজারি ক্লাবে নাম লেখাবেন। এজন্য একটি সেঞ্চুরি কিংবা উভয় ইনিংসে জোড়া হাফসেঞ্চুরি করতে হবে। টেস্ট, ওয়ানডে, টি-২০ মিলিয়ে তিন ফরম্যাটে তামিমের রান ৩৮৭ ম্যাচে ৪৪৮ ইনিংসে ১৫ হাজার ১৯২। মুশফিকের রান ১৫ হাজার ১৫৯। আর ৩৪ রান করলে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে তামিমকে পেছনে ফেলবেন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ জয় পায় মাত্র একটি। ১৪ নম্বর টেস্টে নাজমুল বাহিনী পাত্তাই দেয়নি শান বাহিনীকে। যদিও আগের ১৩ টেস্টে একটি মাত্র ড্র ছিল টাইগারদের। সেটা আবার করেছিল দ্বিতীয় ইনিংসে তামিমের ডাবল সেঞ্চুরি ও ইমরুলের ১৫০ রানে ভর করে। আগের টেস্টে বড় কোনো জুট হয়তো হয়নি। কিন্তু মুশফিক একাই দলকে খেলিয়েছেন এবং উপহার দিয়েছেন ফ্রেমে বাঁধানো ঐতিহাসিক জয়।