ঐতিহাসিক শহর দিল্লি। ভারতের রাজধানীজুড়ে রয়েছে দিল্লি জামে মসজিদ, বাদশাহ হুমায়ুনের সৌধ, কুতুব মিনার, লাল দুর্গ, দিল্লি গেট, লাহোর গেটের মতো অজস্র ঐতিহাসিক সব নিদর্শন। আজ সন্ধ্যায় দেশটির দ্বিতীয় পুরনো অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। গোয়ালিয়রে ৭ উইকেটে হেরে ৩ ম্যাচ সিরিজে পিছিয়ে রয়েছে টাইগাররা। সিরিজে ফেরার ম্যাচের আগের দিন জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে সাবেক অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ টি-২০ ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। অথচ সাবেক অধিনায়ক অবসরের সিদ্ধান্ত নেন ঢাকাতে। গতকাল অবসরের বিষয়ে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘এই সিরিজের শেষ ম্যাচের পরেই আমি টি-২০ থেকে অবসর নেব। এ সফরে আসার আগেই আমি ঠিক করে রেখেছিলাম। আমি আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার কোচ, অধিনায়ক, নির্বাচক এবং বোর্ড সভাপতিকেও সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। আমি মনে করি, এটাই সঠিক সময় এ সংস্করণ থেকে সরে ওয়ানডেতে মনোযোগ দেওয়ার। আমার জন্য এবং পরের টি-২০ বিশ্বকাপের কথা যদি ভাবি, দলের জন্যও এটাই সঠিক সময়।’ সাবেক অধিনায়কের ঘোষণায় পঞ্চ পা-বের আরও একজনের ক্যারিয়ারের যতি পড়ছে টি-২০ ক্রিকেটে। অবশ্য দিল্লি নয়, হয়তো হায়দরাবাদেই ক্যারিয়ারের শেষ টি-২০ ম্যাচ খেলবেন ১৩৯ টি-২০ ম্যাচে ১১৭.৭৪ স্ট্রাইকরেটে ২৩৯৫ রান করা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
মাহমুদুল্লাহ টি-২০ ক্রিকেটে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন গতকাল। সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন ২০২১ সালের জুলাইয়ে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। শেষ টেস্ট ইনিংসটিতে খেলেছিলেন ১৫০ রানের ইনিংস। যা তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ। অবশ্য এখনো ওয়ানডে খেলছেন সাবেক অধিনায়ক। মাহমুদুল্লাহ অভিষেক টেস্ট খেলেন ২০০৯ সালে। ৫০ টেস্টে রান করেছেন ৫ সেঞ্চুরিতে ২৯১৪ এবং ২৩২ ওয়ানডেতে রান করেছেন ৫৩৮৬।
দেশের ক্রিকেটের সেরা পাঁচ ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ। এই পাঁচ অধিনায়ক ও তারকা ক্রিকেটারদের ক্রিকেটপ্রেমীরা আদর করে ডাকেন ‘পঞ্চ পা-ব’। পাঁচ তারকার মধ্যে মাশরাফি খেলছেন না আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। তামিম হয়তো অচিরেই ফিরবেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। এখন বাংলাদেশ-ভারত সিরিজে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। গত টি-২০ বিশ্বকাপে নিজের শেষ টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন সাকিব। ঘরের মাটিতে টেস্টকে বিদায় জানানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে বিদায় জানাবেন ওয়ানডে ক্রিকেটকে। মুশফিক ভারতের বিপক্ষে খেলেছেন টেস্ট সিরিজ। মাহমুদুল্লাহ খেলছেন ওয়ানডে। সহসাই বাংলাদেশের ক্রিকেট পাঁচ তারকাশূন্য হচ্ছে। একে একে সবাই বয়সের সঙ্গে লড়াই করে ক্লান্তিতে বিদায় জানিয়েছেন এবং জানাচ্ছেন ক্রিকেটকে। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটিং শিল্পী মাহমুদুল্লাহ। ২০০৭ সাল থেকে টাইগারদের জার্সি গায়ে চড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। টি-২০ ক্রিকেটে তার অভিষেক নাইরোবির জিমখানা স্টেডিয়ামে। কেনিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেটে ম্যাচে ২ রান করেছিলেন। সর্বশেষ গোয়ালিয়রে করেন ১ রান। দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার ক্যারিয়ারে বহু ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছেন। অধিনায়ক হিসেবেও সফল। ভারতের বিপক্ষে দেশটির মাটিতে এখন পর্যন্ত একমাত্র জয় টি-২০ ক্রিকেটে। ২০১৯ সালে ওই ম্যাচের অধিনায়ক ছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তিনি দেশের বিপক্ষে সর্বাধিক ৪৩ টি-২০ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৬ ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। তার নেতৃত্বে ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ এবং নিউজিল্যান্ডকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়েছিল টি-২০ সিরিজে। সাকিব ৩৯ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন ১৬টি। দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৩৯ টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন মাহমুদুল্লাহ। ১২৯টি খেলেছেন সাকিব। তার অধিনায়কত্বে টানা ২৯ টি-২০ ম্যাচ খেলেছে টাইগাররা। মাশরাফির নেতৃত্ব ২৬ ওয়ানডে খেলেছে। টি-২০ ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ছক্কা মাহমুদুল্লাহর ৭৪টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৭টি লিটন দাসের।
অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়াম টাইগারদের পয়মন্ত ভেন্যু। দূষণ নগরীতে ওয়ানডে ও টি-২০ মিলিয়ে দুটি টি-২০ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে মুশফিকের ম্যাচসেরা ৬০ রানের ইনিংসে ভর করে ৭ উইকেটে ম্যাচটি জিতেছিল টাইগাররা। মাহমুদুল্লাহ অপরাজিত ছিলেন ১৫ রানে। এ মাঠে সর্বশেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। ওয়ানডে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি টাইগাররা জিতেছিল সাকিবের অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে। ওই জয়েই ২০২৫ সালের ৮ দলের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। দুই দুটি জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে নাজমুল বাহিনী আজ অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে নামছে।